আম্পানে ভেসে গেছে ১৯ হাজার পুকুর-ঘেরের মাছ

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দক্ষিণাঞ্চলের অসংখ্য ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। বরগুনার তালতলী উপজেলার আন্দারমানিক নদী সংলগ্ন নয়াভাই জোড়া এলাকায় শুক্রবার দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দক্ষিণাঞ্চলের অসংখ্য ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। বরগুনার তালতলী উপজেলার আন্দারমানিক নদী সংলগ্ন নয়াভাই জোড়া এলাকায় শুক্রবার দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্রাথমিক হিসাবে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১৯ হাজার ২৪টি মাছের খামার, ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে এসব পুকুর ও ঘেরের মাছসহ অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি ৫৩ দশমিক ১৪ লাখ টাকা। বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য কার্যালয় এই হিসাব করেছে।

তবে সরকারি হিসাবের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি আরও চার-পাঁচ গুণ বেশি বলে জানিয়েছেন মাঠপর্যায়ের মৎস্যখামারিরা। তাঁরা বলেছেন, সরকারি হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির বাস্তব চিত্র আসেনি। যদিও মৎস্য বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এটা প্রাথমিক তালিকা। পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।

বিভাগীয় মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, আম্পানে বিভাগের মৎস্য সম্পদের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা সর্বশেষ সিডরের পর আর হয়নি। ঝড়ে ২৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির চাষ করা মাছ, চিংড়ি ও পোনা। শুধু বরিশাল জেলার ৫৭টি ইউনিয়নের ৮৮৩টি পুকুর ও ৩৬৯টি ঘেরের মাছ ভেসে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

অন্যদিকে ভোলার ৪৮টি ইউনিয়নের ২ হাজার ২৩০টি পুকুর ও ৪৪৯টি ঘের থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। এর আনুমানিক মূল্য ৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। বরগুনায় ২০টি ইউনিয়নের ১২০টি পুকুর ১০টি মাছের ঘের মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। পিরোজপুরে ৬ হাজার ৪৩০ পুকুর ও ৩২৫টি ঘেরের ক্ষতি ৩ কোটি ৭৬ লাখ, ঝালকাঠিতে ১ হাজার ৯০০ পুকুর এবং ১০০ ঘেরের ৩ কোটি ৭ লাখ এবং পটুয়াখালীতে ৫ হাজার ৭৫৪টি পুকুর এবং ৬২৩টি ঘেরের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

তবে মাছ ব্যবসায়ী ও খামারিদের সঙ্গে আলাপ করলে তাঁরা এ তালিকার সঙ্গে মাঠপর্যায়ের ক্ষতির পরিমাণের মিল না থাকার দাবি করেন। বরগুনার তালতলী উপজেলার ঘেরমালিকেরা জানান, তালতলী উপজেলার কেবল নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নেই সাত শর ওপরে ছোট–বড় ঘের রয়েছে। এ ছাড়া খোট্টারচর, ছোট বগি, পচাকোড়ালিয়া, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে আরও এক হাজার ঘের রয়েছে। এসব ঘেরের অধিকাংশ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে। জলোচ্ছ্বাসে অধিকাংশ ঘেরের মাছই ভেসে গেছে।

তালতলীর নিশানবাড়িয়ার ঘেরমালিক জাকির হোসেন গতকাল শুক্রবার সকালে বলেন, তাঁর ১০ একর আয়তনের ঘেরের মাছ ভেসে গিয়ে অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব হারিয়ে তাঁর এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

বরগুনা ও পটুয়াখালীর দুই মৎস্যচাষি দাবি করেন, এই দুই জেলাতেই মাছ ভেসে গিয়ে অন্তত ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সহায়তা দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে শুক্রবার পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।