করোনাকালে ব্যতিক্রমী সেবা দিচ্ছে 'সংযোগ'

সংযোগের সমন্বয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে দেওয়া পিপিই বিতরণ। ছবি: সংগৃহীত
সংযোগের সমন্বয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে দেওয়া পিপিই বিতরণ। ছবি: সংগৃহীত

হাসপাতালে জরুরি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) প্রয়োজন? করোনাভাইরাসে সংক্রমিত কারও দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স দরকার? জানালেই ব‍্যবস্থা করে দিচ্ছে ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন 'সংযোগ: কানেক্টিং পিপল'।

করোনাকালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় খাদ্যসহায়তা পৌঁছানো থেকে শুরু করে নানাভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে সংগঠনটি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একদল সাবেক শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার একঝাঁক তরুণ গড়ে তুলেছেন সংযোগ।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি দুর্যোগ–পীড়িত মানুষের পাশে কীভাবে দাঁড়ানো যায়, এর নানা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে। তহবিল সংগ্রহ নয়, কেবল দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে 'সংযোগ' ঘটিয়ে দেওয়াই তাঁদের প্রধান কাজ।

সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী আহমেদ জাভেদ প্রথম আলোকে বলেন, 'সংযোগ মূলত করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটা প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এ গ্রুপে প্রতিদিনই চিকিৎসক, শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ নানা ধরনের চাহিদা বা সমস্যার কথা জানান। আমরা তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন দাতা বা প্রতিষ্ঠানের সংযোগ ঘটিয়ে দিই। করোনার আগেও আমরা টুকটাক কাজ করতাম। এখন তার পরিসর বেড়েছে।'

এরই মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর ও রাঙামাটির বিভিন্ন হাসপাতালে পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ নানা চিকিৎসা সহায়ক সরঞ্জাম পৌঁছে দিয়েছে তারা।

এ ছাড়া নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা, ভোলা, পঞ্চগড়, রাঙামাটি, আখাউড়া, সিরাজগঞ্জ, যশোর, পাবনা, ঠাকুরগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও মাদারীপুরের শিবচরে চিকিৎসকদের চাহিদা অনুযায়ী সুরক্ষা সরঞ্জাম পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে সংগঠনটি। 

বাংলাদেশ বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ৭০০ পিপিই পৌঁছে দিয়েছে সংযোগ। সারা দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার মেডিকেল গাউন, ১০ হাজার মাস্ক ও ২ হাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের কাজ করেছে তারা।

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর ক্লিনিকে সংযোগের সমন্বয়ে দেওয়া পিপিই বিতরণ। ছবি: সংগৃহীত
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর ক্লিনিকে সংযোগের সমন্বয়ে দেওয়া পিপিই বিতরণ। ছবি: সংগৃহীত

চিকিৎসকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য মাস্ক ও স্যানিটাইজার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে সংগঠনটি।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তিক মানুষের প্রতি খাদ্যসহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। সংগঠনটির সমন্বয়ে খাদ্যসহায়তা পেয়েছেন যমুনা পাড়ের জেলেরা, বরিশালের আগৈলঝড়া ও গৈলা উপজেলার মৃৎশিল্পীরা। আরও সহযোগিতা পেয়েছে বরিশালের ১৪৭টি বেদে পরিবার, নেত্রকোনার ২৫০টি চর্মকার ও সিলেটের ১৮৫টি মণিপুরি পরিবারসহ বগুড়া, ভৈরব ও আশুলিয়ার নিম্নমধ্যবিত্ত বেশ কিছু পরিবার। 

এ ছাড়া 'টিচার কোভিড এইড' কার্যক্রমের মাধ্যমে সাভারের আশুলিয়া, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, মুন্সিগঞ্জ ও ভৈরবের পাঁচ শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, গাজীপুর, বরিশাল ও ঢাকার খিলক্ষেতের মাদ্রাসাশিক্ষকদের মাঝে খাদ্য ও নগদ টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে সংযোগ।

সংগঠনটির সহপ্রতিষ্ঠাতা আবু আহমেদ মোবাশ্বেরুল করিম বলেন, 'সংযোগের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের প্রচেষ্টায় শামিল হচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত প্রকৌশলীসহ দেশের বহু সংবেদনশীল মানুষ। বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নানা সহযোগিতা নিয়ে সংযোগের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্নোটেক্স গ্রুপ, মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, অঙ্কুর ইন্টারন্যাশনাল, কেয়ার অ্যান্ড শাইন, বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি অ্যাকশন এগেইন্সট কোভিড-১৯ (বিকন এইড), বুয়েটিয়ান ইনভেস্টমেন্ট নেটওয়ার্ক (বিন), পে ইট ফরোয়ার্ড, বাংলাদেশ আর্মার গ্রুপ, উর্মি গ্রুপসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। সংযোগ পরিবারের পক্ষ থেকে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।'

মাঠপর্যায়ে কাজ করা পুলিশ ও প্রত‍্যন্ত অঞ্চলের সংবাদকর্মীদের সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সংগঠনটি।