মানবিক সহায়তায় পাঁচ তরুণের 'আহার ঘর'

পাঁচ তরুণের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সামাজিক উদ্যোগ `আহার ঘর`। এর পক্ষ থেকে প্রতিদিন অসহায় মানুষের কাছে বিনা মূল্যে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ভৈরব, ২৫ মে। ছবি: প্রথম আলো
পাঁচ তরুণের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সামাজিক উদ্যোগ `আহার ঘর`। এর পক্ষ থেকে প্রতিদিন অসহায় মানুষের কাছে বিনা মূল্যে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ভৈরব, ২৫ মে। ছবি: প্রথম আলো

প্রতিদিন কিছু অসহায় মানুষের ঘরে বিনে পয়সায় রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়ার ভাবনা থেকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পাঁচ তরুণের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে 'আহার ঘর'। এই ঘর থেকেই এখন প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৫০ জনকে রান্না করা খাবারের প্যাকেট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

আজ সোমবার ঈদের দিন পৌঁছে দেওয়া হলো এক হাজার মানুষের হাতে দুপুরের খাবার। রাতে পৌঁছানো হবে আরও কিছু মানুষের ঘরে। করোনার এই দুর্যোগে শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার পাঁচ তরুণের এই উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে প্রশংসিত হচ্ছে।

আরেফিন জালাল পৌর শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। একটি কর্মসূচিতে তাঁর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল। আরেফিন বলেন, 'তারুণ্য জাগ্রত হলে, মানবিকতা মরে যায় না। কয়েকজন তরুণের মানবিকতা দেখে আবার নতুন করে বিশ্বাস ফিরে এল। ছেলেরা টাকা সংগ্রহ করছে, বাজার করছে, রান্না করছে। আবার প্যাকেট করে নীরবে বিপদগ্রস্ত মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে।' তাঁর মতে, এই দুর্যোগে এমন সেবার চেয়ে ভালো কাজ আর কী হতে পারে।

আহার ঘরের স্বপ্নদ্রষ্টারা হলেন সিদরাতুল রশিদ, আরাফাত ভূঁইয়া, সুমাইয়া হামিদ, হৃদয় ইভান ও মো. রবিন। তাঁরা একে অপরের ঘনিষ্ঠ এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংগঠক। তাঁদের মধ্যে আহার ঘর প্রতিষ্ঠার ভাবনা আসে সিদরাতুল রশিদের কাছ থেকে। করোনা দুর্যোগ চলাকালে পাশের বাড়ির কিছু মানুষের অসহায় অবস্থা দেখে মূলত তাঁর মন নাড়া দেয়। এরপর বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে কাজে নেমে পড়েন।

কাজের সূচনা হয় ১৪ মে। ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁরা ডিম, সবজি, ডাল, সাদা ভাত আর খেজুর নিয়ে হাজির হন পৌর শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের পঞ্চবটি এলাকায়। প্রথম দিন ১১২ জনকে প্যাকেট দেওয়া হয়। আহার ঘরে আজ রান্না হয় মোরগ পোলাও। শুরুতে নিজেদের উপার্জিত অর্থ দিয়ে সূচনা হলেও পরবর্তীতে অনেকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।

সিদরাতুল রশিদ বলেন, 'অনেকের ঘরে চুলায় আগুন ধরা বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। বড়রা খিদে চেপে বসে থাকতে পারলেও শিশুদের কান্না আটকে রাখা যাচ্ছে না। এমন কান্নার শব্দ আমি পেয়েছি। সেই কারণেই ঘরে বসে থাকতে পারিনি।'

ঈদের আনন্দ ভাটা পড়েছে জানিয়ে সিদরাতুল রশিদ বললেন, কেউ কারও বাড়িতে যেতে পারছে না। এই কারণে সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে গরিবদের। ঈদের দিনদুপুরে যেন না খেয়ে থাকতে হয় সেই কারণে আজকের কর্মসূচিটা বড় করা হয়েছে এবং ম্যানুতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। ঈদের পরও আরও কিছুদিন এই কর্মসূচি সচল রাখা হবে।