ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ

বজলুর রশিদের ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
বজলুর রশিদের ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

গুলি ছুড়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবদুল মতিন ও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ওই ইউনিয়নের ঝাউপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চেয়ারম্যান আবদুল মতিন (৫০) ও তাঁর সমর্থক আবদুল মতিনকে (৩৫) আটক করেছে পুলিশ। চেয়ারম্যান মতিন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সমর্থক মতিন থানা–পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝাউপাড়া গ্রামের বীজ ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন যুবলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. বজলুর রশীদ গতকাল সোমবার ৩০০ হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে ঈদসামগ্রী বিতরণ করেন। এ নিয়ে চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ হন।
আজ দুপুরে চেয়ারম্যান আবদুল মতিন তাঁর সমর্থকদের নিয়ে ঝাউপাড়া গ্রামে যান। তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে লোকবল নিয়ে বজলুর রশীদের বাড়িতে গিয়ে চড়াও হন। বজলুর রশীদ বাড়িতে না থাকায় তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালায় চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা। এ সময় বজলুর রশীদের সমর্থকেরা জোটবদ্ধ হয়ে চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ও তাঁর সমর্থকদের ধাওয়া করেন।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চেয়ারম্যানের আরও দুই শতাধিক সমর্থক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঝাউপাড়া গ্রাম দখলে নেন। একপর্যায়ে বজলুর রশীদ ও তাঁর এক সমর্থকের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এলাকায় ভীতি সৃষ্টি করতে চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা ৬–৭টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। গুলির শব্দে গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিস্থিতি শান্ত হয়। চেয়ারম্যান আবদুল মতিনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন পুলিশ। থানা–পুলিশের কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে নাটোর নিয়ে যায় চেয়ারম্যানকে।

গুরুদাসপুর থানার পুলিশ বাড়িঘর ভাঙচুরের ও চেয়ারম্যানের সমর্থককে আটকের খবর নিশ্চিত করলেও গুলি ছোড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তবে ঘটনাস্থলে একটি গুলির খোসা পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। গুলির খোসার ছবিটি গণমাধ্যমকর্মীদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
প্রতিপক্ষ বজলুর রশীদ দাবি করেন, চেয়ারম্যানের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই তাঁর। শুধু গরিবদের ঈদসামগ্রী বিতরণ করায় চেয়ারম্যান তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এ থেকেই তাঁর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। গুলি ছুড়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছেন। এ ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি।

চেয়ারম্যানের সমর্থকদের হামলার প্রস্তুতি। ছবি: সংগৃহীত
চেয়ারম্যানের সমর্থকদের হামলার প্রস্তুতি। ছবি: সংগৃহীত

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান আবদুল মতিনের বড় ভাই সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল মজিদ দাবী করেন, তাঁর ভাই ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য ঝাউপাড়া গ্রামে পৌঁছালে বজলুর রশীদের সমর্থকেরা তাঁর ভাইকে গালমন্দসহ হেনস্তা করেন। পরে তাঁর সমর্থকেরা চেয়ারম্যানকে আনার জন্য ঝাউপাড়া গ্রামে যান। তবে গুলি ছোড়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাহরুল ইসলাম বলেন, ঝাউপাড়া গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করার পর পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। গুলি ছোড়া, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয়য়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
নাটোর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মো. আনারুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান আবদুল মতিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। গুলি ছোড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।