তলিয়ে গেছে নলকূপ, শৌচাগার, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ৫ গ্রাম
পথঘাট ডুবে আছে। পুকুর, ডোবা তলিয়ে গেছে। উঠানেও পানি। বিশুদ্ধ পানি পানের গভীর নলকূপও ডুবে আছে। তলিয়ে গেছে শৌচাগারও। এর ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের মানুষ। এগুলো হলো চাড়িপাড়া, নয়াকাটা, চৌধুরীপাড়া, নাওয়াপাড়া ও মুন্সিপাড়া।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে রাবনাবাদ চ্যানেলের জোয়ারের পানিতে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। যেদিন ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, সেদিন সকালে এখানকার ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পরে সাতটি গ্রামের পানি নেমে গেলেও ওই পাঁচটি গ্রাম এখনো তলিয়ে আছে।
লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্থানীয় সদস্য মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এখানকার সাত কিলোমিটার বাঁধ পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। এ কারণে স্বাভাবিক জোয়ারেই ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে গ্রামগুলো প্লাবিত হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন দু্বার করে জোয়ারের সময় পানি ঢুকছে।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, গ্রামগুলোর চারদিক পানিতে থই-থই করছে। গ্রামের লোকজন নৌকায় চলাচল করছেন। অনেকে জোয়ারের আটকে থাকা পানিতে গোসল করছেন।
কয়েকজন বলেন, এসব গ্রামের মধ্যে শুধু চাড়িপাড়ার স্বরূপ আলী হাওলাদার বাড়ির পুকুরটি ডোবার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। খাবার পানির জন্য এটিই এখন গ্রামবাসীর ভরসা। আশপাশের মানুষ নৌকায় করে এসে এখান থেকে রান্নার পানি নিয়ে যাচ্ছেন। তবে দূরের গ্রামের লোকজন আটকে থাকা পানিতেই রান্নাসহ গোসল করেন।
চাড়িপাড়া গ্রামের গৃহবধূ জেসমিন বেগম বলেন, ‘রান্না কইর্যা খামু হেই পানিডু নাই। গ্রামের একটা পুকুর খালি তলায় নাই। হেইডায়ই মোগো বাঁচাইছে। অ্যাহন হেইহানে গোনে পানি আইন্যা রান্নার কাজ করি। এ কয়দিন ধইর্যা এই রহমই চলছে মোগো জীবন।’
আরও কয়েকজন বলেন, জোয়ারের পানিতে শৌচাগার ডুবে গেছে। ফলে মলমূত্র পানিতে মিশে যাচ্ছে। এতে মানুষজন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে।
নয়াকাটা গ্রামের আবদুল করিম প্যাদা বলেন, ‘মোগো খাবার পানির কষ্ট। পয়োনিষ্কাশন লইয়া সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দ্যাহা দেছে। মানুষজন বানের পানিতেই মলমূত্র ত্যাগ করছে। এই সব সবখানে ছড়াইয়া পড়ছে। এইতে আমাগোই ক্ষতি হইতেছে।’
নাওয়াপাড়া গ্রামের মেহের আলী ফকির, সোনা বরু বিবি, মুন্সিপাড়া গ্রামের আক্তার খাঁ, রওশন আরা বেগম, চৌধুরীপাড়া জসিম হাওলাদারও একই ধরনের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরলেন।
জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বিশ্বাস বলেন, এসব গ্রামে ১২-১৩টি গভীর নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক হাজারের মতো শৌচাগার নষ্ট হয়েছে। এখন এসব গ্রামে গভীর নলকূপ ও শৌচাগার স্থাপন করা যাবে কী না, সেটাও এক সমস্যা।
এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. জিহাদ হোসেন বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে এসব গ্রামের মানুষের জন্য ১০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং বিশুদ্ধ পানি ধরে রাখার ৭০টি জারিকেন দিয়েছি। এর মধ্যে নতুন করে ১০টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত রিং স্ল্যাব রয়েছে। শৌচাগার কতগুলো লাগবে, ইউপি চেয়ারম্যান তার চাহিদা দিলে আমরা দিতে পারব।’