দ্রুত কাজে যোগ দিতে চান করোনাজয়ী দুজন

স্বাস্থ্যকর্মী মাঞ্জুরুল ইসলাম তালুকদার ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী ইউনুস আলী। ছবি: সংগৃহীত
স্বাস্থ্যকর্মী মাঞ্জুরুল ইসলাম তালুকদার ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী ইউনুস আলী। ছবি: সংগৃহীত

'গ্রামের সাধারণ মানুষ এমনিতেই ভালো হাসপাতালে যেতে পারে না। তার ওপর যে পরিস্থিতি, বাস চলে না। মানুষের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ। এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোই গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা। মানুষের মুখের দিকে চেয়ে আমি দ্রুত কাজে যোগ দিতে চাই।' এসব কথা টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গবড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী মো. মাঞ্জুরুল ইসলাম তালুকদারের।

৫ মে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পান মাঞ্জুরুল ইসলাম। দীর্ঘ ২২ দিন নিজের বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হয়েছেন তিনি। আক্রান্তের পর দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষায় গতকাল মঙ্গলবার করোনা নেগেটিভ জানতে পারেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাঁকে জানানো হয় তিনি সুস্থ। সম্প্রতি জন্ম নেওয়া শিশু সন্তানের মুখ এবার দেখতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

মাঞ্জুরুল ছাড়াও মঙ্গলবার মির্জাপুরের আরও তিনজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মির্জাপুরে আক্রান্ত ৩০ জনের মধ্যে ছয়জন সুস্থ হলেন। এর আগে উপজেলার ভাওড়া গ্রামের অখিল চন্দ্র সরকার ও সাটিয়াচড়া গ্রামের আনন্দ রাজবংশী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর মারা গেছেন একজন।

সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ইউনুস আলী (২৮), উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের তেলিনা গ্রামের দিনমজুর হযরত আলী (৪২) ও লালমনিরহাট সদরের বাসিন্দা মির্জাপুরের গোড়াই শিল্পাঞ্চলের একটি বাড়ির ভাড়াটিয়া নির্মাণ শ্রমিক সুজন মিয়া (৩৫)। তাঁরা তিনজন টাঙ্গাইলে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার বলিভদ্র গ্রামের বাসিন্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ইউনুস আলী বলেন, 'সাড়ে চার বছরের পোলাডাই (ছেলে) ঈদের ফোন কইর্যা কইছিল বাবা আমার জন্য কমলা আইনো। ওতো আর জানে না আমি কই আছি। আর ম্যাডামও (উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা) কইলো বাড়ি গিয়্যা সবার লগে দ্যাহা কইরা আসো। এত দিন পর বাড়ি আইতে পারছি। খুবই ভালো লাগতাছে। কষ্ট অইতাছে হাসপাতাল নিয়্যা। আমি কাম না করলে হাসপাতালের রোগীর ময়লা পরিষ্কার করার লোকের অভাব হইবো। ত্যাই তাড়াতাড়ি কামে যামু।'

করোনাজয়ী দিনমজুর হযরত আলী বলেন, 'আমার খুবই ভালো লাগতাছে। বউ পোলাহান ছাড়াও আত্মীয়স্বজন মুরুব্বীগো কাছে পাইছি। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।'

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, মির্জাপুরে করোনায় আক্রান্ত আরও ২৩ জন বিভিন্ন হাসপাতাল ও নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। এ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য ৬৬০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৬৩৫ জনের ফল পাওয়া গেছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ২ হাজার ৬৯৩ জনের মধ্যে ২ হাজার ৩৫০ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন। বাকি ৩৪৩ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।