মানুষ আর কত দিন এভাবে বাঁচবে

>

করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ–বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ–বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

করোনাকালে একটা প্রশ্ন এসেই যাচ্ছে, মানুষ আর কত দিন বাঁচবে এভাবে? কারণ, মৃত্যু যতটুকু ভয় ধরায়, তার চেয়েও বড় ভয় এই বুঝি আমি মরে গেলাম চিন্তাটি পেয়ে বসা! আরেক দিক থেকে ঘরে থাকলেও অনিরাপদ হয়ে ওঠা এবং বাইরে গেলেও কোনোভাবেই দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে পারে না যে আমি নিরাপদ!

তবে? সম্পর্ক ছাড়া, একসঙ্গে হয়ে মনের ভাব প্রকাশ ছাড়া মানুষ বাঁচে কি?

আমরা বোধ হয় আত্মিকভাবে অনেকটাই মৃত এখন! যখন কেউ পানিতে ডুবে যেতে থাকেন, তখন বিশ্বাস করেন তিনি উঠতে পারবেন আর তাই প্রচণ্ড জোরে পানিতে হাত–পা নাড়তে থাকেন। আর নিজের অজান্তেই তলার দিকে যেতে থাকেন! একসময় বাঁচার প্রয়াসই তাঁকে ডোবায়!

আমরাও প্রচণ্ড রকম হাত–পা নাড়ছি আর বাঁচার চেষ্ট করছি, তাতেই সব মরে যাচ্ছে! হতাশা পেয়ে বসেছে প্রবীণদের মধ্যেও! ঘরে থেকে থেকে তাঁরা বলছেন আমরা আর পারছি না। এর চেয়ে বাইরে গিয়ে মরলেও ভালো! প্রেমিক–প্রেমিকারা প্রচণ্ড রকম আত্মকেন্দ্রিক হতাশ হয়ে পড়ছে! ব্যাহত হচ্ছে জীবন। মানুষের আর বেঁচে থাকার বাকি রইল কী?

শত ব্যস্ততার পর ঘরে এসে সন্তানকে গলা জড়িয়ে ধরে আদর করার ক্ষমতা হারিয়েছে মানুষ, গালে-কপালে চুমো দেওয়ার অধিকার নেই এখন আর। খেলার মাঠে নিস্তব্ধতা, ভিক্ষুক ভিক্ষে করতে এলেও মেইন গেটে আর হাত দিয়ে কড়া নাড়ার সাহস পায় না, গাছে ফুল ফুটে থাকলেও ঘ্রাণ নিতে যায় না কেউ। তবে এই পৃথিবীর বুকে মানুষ বেঁচে থেকে কিসের যুদ্ধ করছে এবং কত দিন এ যুদ্ধ করতে হবে, কেউ কি তা জানে?

সামাজিক দূরত্ব মানতে চাইছে না কেউ। তবে সবাই জানে দূরত্ব না মানলে মরতেও হতে পারে। কী আশ্চর্য জীবন আমাদের! শুধু আমাদের দেশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশও হতাশ হয়ে পড়েছে! করোনাভাইরাসের প্রভাবে হতাশা ও বিশ্বে আত্মহত্যা বেড়েছে। তবে এভাবে বেঁচে থাকা এর নাম কী হতে পারে।

বাঁচা–মরার মধ্য জায়গার নাম কোথাও দেওয়া আছে কি? কঠিন, তরল, বায়বীয় পদার্থের সঙ্গে আরেকটি পর্যায় রয়েছে যার নাম প্লাজমা অবস্থা! তবে কি আমরা এখন প্লাজমা অবস্থার মতোই কোনো অবস্থায় আছি?
মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে সব উপাদান নিয়েই বাঁচতে হবে। এর কোনো এদিক–সেদিক হলে সাধারণভাবে মানুষ বাঁচতে পারবে না।

নিয়মের পৃথিবীতে নিয়মগুলো পালন করে সব কাজ চালানোই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী দিনে শুধু ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিষ্কার নয়, প্রয়োজন টেস্ট সহজীকরণ ও রোগী পৃথক্‌করণ।

জীবাণুনাশক স্প্রের চেয়েও প্রয়োজন দ্রুত টেস্ট পদ্ধতির আবিষ্কার। হার্ড ইমিউনিটি, ভ্যাকসিন, ওষুধ সবই প্রয়োজন মানুষের বাঁচার জন্যই। তাই শনাক্ত করে রোগাক্রান্ত মানুষদের আলাদা করাই এখন বড় কাজ হবে। মানুষকে সাহস দিতে হবে। বোঝানোর জায়গায় সচেতন করে তাদের কাজে ফিরিয়ে আবার পৃথিবী গতিশীল করতেই হবে।

কিন্তু মানুষ মরছে, আমি বোধ হয় আর বাঁচব না এই চিন্তায়! এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসুন। খুব সাবধানে কাজ করুন, সব কাজ করুন। নিয়ম মেনে চলুন, পাশের মানুষকে, প্রতিষ্ঠানকে বলুন কীভাবে এ থেকে বাঁচা যায় আর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন যে মরার আগেই মরে যাবেন না। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টি করার পেছনে বড় কারণ হলো প্রকৃতির যত্ন ও সৃষ্টিকে ভালোবাসা। ভালোবাসতে শিখুন প্রকৃতির উপাদানকে এবং যত্নে রাখুন নিজেদের। তবেই পৃথিবী আবার নিরাপদ হয়ে উঠবে আর আমরা পাব নিরাপদ জীবন।

*লেখক: সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও রসায়নবিদ, শ্রীপুর, গাজীপুর। [email protected]