সেই অনাথ ভাইবোনের পাশে অনেকে

অনা্থ ভাইবোনের পাশে এখন অনেকেই দাঁড়িয়েছেন।ছবি: প্রথম আলো
অনা্থ ভাইবোনের পাশে এখন অনেকেই দাঁড়িয়েছেন।ছবি: প্রথম আলো

ঈদের দিনে ডাল-ভাত খাওয়া অনাথ ভাইবোনের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। খাবারও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে তাদের কাছে। বাড়তি ঈদের খাবার প্রতিবেশীদের বিলিয়ে দিয়েছে তারা। এই দুই ভাইবোন এ জন্য প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

২৫ মে প্রথম আলোর অনলাইনে ‘অনাথ ভাইবোনের ঈদের খাবার ডাল-ভাত’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

উপজেলার বুজরুককোলা গ্রামের আবদুল আলীর সন্তান রায়হান হোসেন (১৫) ও আরিফা খাতুন (১৩)। বাবা আবদুল আলী সাত বছর আগে মারা যান। এরপর পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা রেহেনা বেগমের আদরে স্নেহে ছিল তারা। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারতেন না রেহেনা বেগম। এরপরও এখান-ওখান থেকে কিছু সংগ্রহ করে সন্তানদের দেখাশোনা করে আসছিলেন তিনি। তবে দেড় বছর আগে তিনিও মারা যান। সে থেকে অনাথ রায়হান হোসেন ও আরিফা খাতুন। জীবনসংগ্রামে নামতে হয় দুই ভাইবোনকে। বাবার রেখে যাওয়া আধা ভাঙা ভ্যানের প্যাডেল কিছুদিন ঘোরালেও তা বেশি দিন পারেনি রায়হান হোসেন। পরে পেশা পরিবর্তন করে শিশু বয়সে অন্যের পানবরজে কাজ শুরু করে।

এত কষ্টের মধ্যে দুচোখভরা স্বপ্ন তাদের। লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত হবে। এ জন্য শত কষ্ট করেও চালিয়ে যাচ্ছে লেখাপড়া। আরিফা খাতুন মচমইল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এবং রায়হান হোসেন হাটগাঙ্গোপাড়া টেকনিক্যাল স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

গত রোববার দুপুরে তাদের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই প্রতিবেদকের দেখা ও কথা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এসেছিল কিছু চাল-ডাল নেওয়ার জন্য। চাল-ডাল এবং কিছু নগদ টাকা দিয়েছেন ইউএনও। এ দিয়েই এবারের ঈদ করবে বলে জানায়।

তাদের এই দুরবস্থা নিয়ে পরদিন প্রথম আলো অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ হলে সাড়া পাওয়া যায়। ঈদের দিন বিকেলে অনাথ দুই ভাইবোনের বাড়িতে সেমাই, লাচ্চা, চিনি, পোলাওয়ের চাল এবং টাকা নিয়ে হাজির হন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান। পরের দিন ভবানীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলামও খাবার ও টাকা দেন। ভবানীগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির নেতারা তাদের লেখাপড়ায় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ ছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রাজিব হাসান এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন। অনাথ দুজনের পাশে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেন। দুবাই থেকে রিয়াজ আমিন চৌধুরী ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে খায়রুল হাসান সবুজ নামের দুই ব্যক্তি ই-মেইল করে অনাথ শিশুদের যাবতীয় দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

রায়হান হোসেন ও আরিফা খাতুন জানায়, সংবাদ প্রকাশের পর থেকে অনেকে এসে খোঁজখবর নিয়েছেন। অনেকে খাবারও দিয়েছেন। অতিরিক্ত কিছু খাবার গরিব প্রতিবেশীদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। তারা এ জন্য প্রথম আলো ও যাঁরা পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে। লেখাপড়া শিখে মানুষ হতে চায় তারা। এ জন্য ওই সব হৃদয়বান ব্যক্তিকে তাদের পাশে থাকার অনুরোধ জানিয়েছে।

বাগমারা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রথম আলোর অনলাইনে খবরটি পড়ার পর অনাথ দুই ভাইবোনের বাড়িতে ছুটে গিয়েছি। তাদের অবস্থা দেখে নিজের অজান্তেই কেঁদেছি। করোনাভাইরাসের সময়েও আমাদের সাহায্য তাদের কাছে পৌঁছেনি, তা ভাবতে অবাক লাগছে।’