সিংড়ায় তলিয়ে গেছে পৌনে চার শ বিঘা ভুট্টার খেত

তলিয়ে যাওয়া খেত থেকে ভুট্টা তুলে এনে সড়কের পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। সেখানেও জমেছে পানি। আজ শুক্রবার দুপুরে সিংড়ার ডাহিয়া গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
তলিয়ে যাওয়া খেত থেকে ভুট্টা তুলে এনে সড়কের পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। সেখানেও জমেছে পানি। আজ শুক্রবার দুপুরে সিংড়ার ডাহিয়া গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

উজান থেকে আসা ঢলের পানিতে নাটোরের সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের প্রায় পৌনে চার শ বিঘা ভুট্টার খেত তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় এক কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। সিংগার খালের মুখ বন্ধ থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত খালটির বন্ধ মুখ খনন করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

ডাহিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় চাষি ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ডাহিয়া ইউনিয়নে ধানের পরই অন্যতম অর্থনৈতিক ফসল ভুট্টা। এবারও এই ইউনিয়নে ৪৫০ বিঘা জমিতে ভুট্টাচাষ হয়েছে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে খেত থেকে ভুট্টা সংগ্রহ শুরু হয়। মে মাসের শেষের দিকে পুরোদমে ভুট্টা উঠতে শুরু করে। কিন্তু এবার শেষ মুহূর্তে আম্পানের ঝড়ো হাওয়ায় প্রায় সব জমির ভুট্টাগাছ মাটিতে শুয়ে পড়ে। আম্পানের প্রভাবে একটানা বৃষ্টি হওয়ায় উজান থেকে ঢলের পানি সিংগার খাল হয়ে ডাহিয়া ইউনিয়নে ঢোকে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি খাল উপচে ভুট্টার জমি তলিয়ে যায়। ফলে চাষিদের পক্ষে তড়িঘড়ি করে ভুট্টা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। খেতেই বেশির ভাগ ভুট্টা নষ্ট হয়ে যায়।

ঝড়ের পর পরই কিছু চাষি পাকা, আধা পাকা ও ভেজা ভুট্টা সংগ্রহ করে সিংড়া-তাড়াশ সড়কের পাশে জড়ো করে রেখেছিলেন। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এসব ভুট্টা রোদে শুকাতে পারেননি। ফলে কয়েক দিনেই ভুট্টার কুশি বের হয়ে পচে যাচ্ছে। আজ শুক্রবার দুপুরে সিংড়া-তাড়াশ-বারুহাস সড়ক হয়ে ডাহিয়াসহ চলনবিলের নিচু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চাষিদের পাশাপাশি পরিবারের নারী সদস্যরাও সড়কে এসে ভুট্টার মুছি থেকে ভুট্টা সংগ্রহ করছেন। অধিকাংশ ভুট্টা ভেজা থাকায় কুশি বের হয়ে পচে গেছে। চাষিরা এসব ভুট্টা সড়কের পাশে রোদে শুকানোর চেষ্টা করছেন।

কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, প্রতি বিঘা জমিতে ৩০ থেকে ৪০ মণ করে ভুট্টা উৎপাদন হয়ে থাকে। এ সময় বাজারে শুকনা ভুট্টা প্রতি মণ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ও কাঁচা ভু্ট্টা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে গড়ে ডাহিয়া এলাকার প্রায় ১৪ হাজার মণ ভুট্টাবাবদ প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন, জমির সব ভুট্টা নষ্ট হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত জমির ৫০ থেকে ৬০ ভাগ নষ্ট হয়েছে। একই সময় ধান ও ভুট্টা কাটার সময় হওয়ায় চাষিরা ধান কাটতে মনোযোগী ছিলেন। তাই তাঁরা সময়মতো ভুট্টা কাটতে পারেননি। এর মধ্যে আম্পানের প্রভাবে ঢলের পানি ডাহিয়াসহ চলনবিলের নিচু এলাকায় ঢুকে পড়েছে।

ভুট্টাচাষি আবুল হোসেন জানান, তাঁর সাত বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ ছিল। এখান থেকে প্রায় ৩০০ মণ ভুট্টা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি পেয়েছেন মাত্র ৭০ মণ। বাঁকি ভুট্টা পানিতে পচে গেছে। ডাহিয়া উত্তর পাড়ার চাষি মোনাজাত আলী জানান, ভুট্টার ক্ষতির মূল কারণ সিংগার খাল। বগুড়া অঞ্চল থেকে ঢলের পানি ওই খাল হয়ে তাঁদের জমিতে ঢুকেছে। খালটির ভাটিতে গুরুদাসপুর উপজেলার বিলসা এলাকায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি বের হয়ে যেতে পারছে না। খাল উপচে পানি আবাদি জমিতে ঢুকছে। খালের ওই বন্ধ অংশ দ্রুত খনন করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

ডাহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, সিংগার খালের ছয় কিলোমিটারের মধ্যে চার কিলোমিটার সম্প্রতি খনন করা হয়েছে। তবে ভাটির অংশের দুই কিলোমিটার খনন না করায় তা বন্ধ হয়ে আছে। ফলে পানি নেমে যেতে পারছে না। খালের পানি ভুট্টাসহ আবাদি জমিতে ঢুকছে। এখন ভুট্টার ক্ষেতে মাজা পরিমাণ পানি রয়েছে। তিনি বিষয়টি উপজেলা পরিষদকে জানিয়েছেন।