সাংবাদিক মিজানুরকে রাজনৈতিক হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতির দাবি

রাজনৈতিক হত্যা মামলায় প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি এ বি এম মিজানুর রহমানকে আসামি করার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন। আজ বাউফল প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে। ছবি: প্রথম আলো
রাজনৈতিক হত্যা মামলায় প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি এ বি এম মিজানুর রহমানকে আসামি করার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন। আজ বাউফল প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে। ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর বাউফলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী তাপস কুমার দাস খুনের মামলায় প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি এ বি এম মিজানুর রহমানকে আসামি করার প্রতিবাদে ও মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা।

বাউফল প্রেসক্লাবের উদ্যোগে আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে বাউফল প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে এ কর্মসূচিতে সাংবাদিক মিজানের বাবা আবদুস ছালাম ও ছেলে আফফানও উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বাউফল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও জনকণ্ঠ-এর প্রতিনিধি কামরুজ্জামান বাচ্চু, সমকাল-এর জিতেন্দ্র নাথ রায়, মানবকণ্ঠ-এর জসিম উদ্দিন, মিজানের বাবা আবদুস ছালাম প্রমুখ। বক্তারা তাপস হত্যা মামলায় মিজানকে আসামি করায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেন।

সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা করার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় একটি মহল কয়েকজন সাংবাদিককে ভয়ভীতি দেখিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সাংবাদিক জসিম উদ্দিন বলেন, মানববন্ধনে না আসার জন্য তাঁকেসহ অনেককে হুমকি দেওয়া হয়েছে। মিজানের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ করলে তাঁদেরও মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হবে। এরপরও তাঁরা মানববন্ধনে এসেছেন। কারণ, মিজান হয়রানির শিকার, এ কথা বাউফলের সবাই জানেন, যার ভিডিও প্রশাসনের কাছেও সংরক্ষণে আছে।

কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ‘ঘটনার শুরুর দিকে মিজান ছিলেন না। কয়েকজনের ফোন পেয়ে মিজান ও আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। আমাদের সঙ্গে থেকেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন মিজান। অথচ তাঁকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। মিজানকে হয়রানি করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই মামলা করা হয়েছে। আমরা অনতিবিলম্বে হত্যা মামলা থেকে মিজানের নাম প্রত্যাহারের জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

জিতেন্দ্র নাথ বলেন, ‘ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি। পাশাপাশি নিরপরাধ কেউ যেন এই মামলায় হয়রানির শিকার না হন, তা দেখার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

মিজানের বাবা অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আবদুস ছালাম মিয়া বলেন, বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশের জেরে তাঁর ছেলেকে বারবার মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। অন্যায়ভাবে তাঁকে শিক্ষকতার চাকরি থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাঁর পুত্রবধূ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, তাঁকে কয়েক দফায় হয়রানিমূলক বদলি করা হয়েছে। হাইকোর্টে রিট করে তাঁকে চাকরি করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এর আগেও তাঁর ছেলেকে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, লুটপাট, মারামারি, গণধর্ষণসহ ছয়টি মামলায় আসামি করা হয়। সব মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি সরকারদলীয় নেতাদের অনিয়মের বিষয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। তারই জেরে এবার তাঁর ছেলেকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। তিনি সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে হত্যা মামলা থেকে মিজানের অব্যাহতি দাবি করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

ঈদের আগের দিন বাউফল পৌরসভার উদ্যোগে থানার পূর্ব পাশে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর সামনের সড়কের খালি জায়গায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনাসংবলিত ব্যানার স্থাপন করা নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় যুবলীগ কর্মী তাপস কুমার খুন হন। তাপসের বাড়ি কালাইয়া ইউনিয়নের কালাইয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম বদু দাস।

এ ঘটনায় ২৫ মে রাতে বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হককে হুকুমের আসামি করে ৩৫ জনের নামে মামলা করেন তাপসের বড় ভাই পঙ্কজ চন্দ্র দাস। মামলায় ২০ নম্বর আসামি করা হয় মিজানুর রহমানকে।