দুই মাস পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া লঞ্চ চালু, নেই সামাজিক দূরত্ব

দুই মাস পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। লঞ্চে ওঠার পর মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। আজ রোববার দুপুরে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে। ছবি: প্রথম আলো
দুই মাস পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। লঞ্চে ওঠার পর মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। আজ রোববার দুপুরে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে। ছবি: প্রথম আলো

দুই মাস বন্ধ থাকার পর রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে আজ রোববার লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী লঞ্চে ওঠার আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা থাকলেও ভেতরে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। এই নৌপথ দিয়ে আজও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে রাজধানীর দিকে ছুটতে দেখা গেছে।

রোববার দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাটে দেখা যায়, গণপরিবহন চালু না হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষজন ছোট বা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে দৌলতদিয়া ঘাটের দিকে আসছেন। আবার অনেক ছোট গাড়ি নদী পাড়ি দিতে ফেরিতে ওঠার জন্য লম্বা লাইন দিয়ে অপেক্ষা করছে। ৫ নম্বর ফেরিঘাট বিকল্প সড়কজুড়ে এক কিলোমিটারের বেশি লম্বা লাইনে শুধু ছোট গাড়ির সারি ছিল। এ ছাড়া মানুষজন বিভিন্ন উপায়ে ফেরিতে করে নদী পাড়ি দিচ্ছেন। এসব মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্বের তেমন বালাই ছিল না। তবে গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ তাঁদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচলের খবর না জানায় ফেরিতেই নদী পাড়ি দিচ্ছেন। পুলিশ এসব মানুষকে ভাগ হয়ে লঞ্চে নদী পাড়ি দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।

লঞ্চঘাটে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পর লঞ্চ চালু হলেও ঘাটে তেমন ভিড় ছিল না। পন্টুনের সঙ্গে কয়েকটি লঞ্চ বেঁধে রাখা। বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক বিভাগ ও পুলিশ যাত্রীদের হাত ধুয়ে লঞ্চে ওঠার পরামর্শ দিচ্ছে। একই সঙ্গে যাঁদের মুখে মাস্ক নেই, অনেক সময় তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে লঞ্চে ওঠার পর সামাজিক দূরত্ব ঠিকমতো মানা হচ্ছিল না। লঞ্চের ভেতর ও বাইরে একজনের শরীরের সঙ্গে আরেকজনের শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ও বসে থাকতে দেখা যায়।

আরিচা লঞ্চ মালিক সমিতির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক নুরুল আনোয়ার বলেন, টানা ৬৬ দিন পর লঞ্চ চালু হয়েছে। লঞ্চ চালুর প্রচার না হওয়ায় এবং গণপরিবহন না চলায় যাত্রীর চাপ নেই। যাত্রীদের লঞ্চে ওঠার আগে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জীবাণুনাশক স্প্রে করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে। সোমবার গণপরিবহন চালু হলে যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে নদী পাড়ি দিতে ঢাকাগামী ছোট বা ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ ছিল বেশি। আজ রোববার দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাট বিকল্প সড়কে। ছবি: প্রথম আলো
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে নদী পাড়ি দিতে ঢাকাগামী ছোট বা ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ ছিল বেশি। আজ রোববার দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাট বিকল্প সড়কে। ছবি: প্রথম আলো

বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক আফতাব উদ্দিনকে হাতমাইক দিয়ে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে ওঠার অনুরোধ জানাতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার অনুরোধ করছি। এরপর লঞ্চে ওঠার পর যদি একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে থাকে, এ ক্ষেত্রে কী করতে পারি?’

দুই ঘাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকির দায়িত্বে ছিলেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ছোট ফেরিতে ৫০ জন এবং বড় ফেরিতে ১০০ জন যাত্রী তোলা নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু মাঝেমধ্যে যাত্রীদের ভিড় বেড়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। লঞ্চঘাটেও একজন এসআইসহ পুলিশ রয়েছে। সেখানেও নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় পণ্যবাহী ও ছোট গাড়ি মিলে প্রায় ২ হাজার ২০০ গাড়ি পার হয়েছে। রাতে গাড়ির চাপ তেমন না থাকলেও ভোর থেকে ছোট গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। ফলে বেলা বাড়ার সঙ্গে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হয়। তবে সোমবার গণপরিবহন চলাচল শুরু হলে চাপ বাড়তে পারে।