মাছ শিকারে সোহরাব আলীর 'জাল নৌকা'

প্রতিদিন সন্ধ্যায় এই নৌকাটির কাঠের বাটামের সঙ্গে চার-পাঁচটি বড় ইট ও গাছের ছোট ডাল-পাতা দিয়ে পানির মধ্যে ডুবিয়ে রাখেন। পরদিন সকালে নৌকাটি পানি থেকে তুললে বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ পাওয়া যায়। কাশিয়াবালা, মির্জাপুর, শেরপুর, বগুড়া। ছবি: সবুজ চৌধুরী
প্রতিদিন সন্ধ্যায় এই নৌকাটির কাঠের বাটামের সঙ্গে চার-পাঁচটি বড় ইট ও গাছের ছোট ডাল-পাতা দিয়ে পানির মধ্যে ডুবিয়ে রাখেন। পরদিন সকালে নৌকাটি পানি থেকে তুললে বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ পাওয়া যায়। কাশিয়াবালা, মির্জাপুর, শেরপুর, বগুড়া। ছবি: সবুজ চৌধুরী

নদীতে পানি বাড়লে অনেকেই মাছ শিকারে নামেন। তাঁদের মধ্যে একজন সোহরাব আলী। পেশায় তিনি একজন কৃষক। তাঁর বাড়ি বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার কাশিয়াবালা গ্রামে।

মাছ শিকারে হরেক রকমের ফাঁদ ব্যবহার করা হলেও সোহরাব আলীর কৌশলটা একটু ভিন্ন। তিনি তৈরি করেছেন নৌকা।
এই নৌকাকে বলা হয় ‘জাল নৌকা’। এটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠের বাটাম ও জাল। প্রথমত, বাটাম দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নৌকার ফ্রেম। এরপর ছোট ছিদ্রের জাল দিয়ে তৈরি ফ্রেমের চারপাশে ঘিরে বেঁধে রাখা হয়। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় জাল নৌকা।
আজ রোববার কাশিয়াবালা গ্রামে যাওয়ার পথে সড়কের পাশে করতোয়া নদীর তীরে দেখা মিলে এই জাল নৌকার। সকালে নদী থেকে নৌকাটি তুলে মাছ নেওয়ার পর এটি রাখা হয়েছে নদীর কিনারায়।

কাশিয়াবালা সড়কের পূর্ব পাশেই কৃষক সোহরাব হোসেনের বাড়ি। এ নিয়ে তিনি বলেন, জমি চাষাবাদের পাশাপাশি করতোয়া নদী থেকে তিনি মাছ শিকার করেন। নিজেকে মৌসুমি মাছশিকারি বলে জানান। নদী থেকে এই জাল নৌকায় তিনি যে মাছ শিকার করেন, তা দিয়ে তাঁর নিত্যদিনের মাছের চাহিদা মেটে।

সোহরাব বলেন, এই জাল নৌকার ওজন ১০ থেকে ১২ কেজি। তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ৫০০ টাকা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এই নৌকাটির কাঠের বাটামের সঙ্গে চার-পাঁচটি বড় ইট ও গাছের ছোট ডাল-পাতা দিয়ে পানির মধ্যে ডুবিয়ে রাখেন। পরদিন সকালে নৌকাটি পানি থেকে তুললে বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ পাওয়া যায়। মাছ শিকারের এই ফাঁদটি আকৃতিতে বড় হওয়ায় মাছও ভালো পাওয়া যায়।

সরেজমিন গেলে আমজাদ হোসেন বলেন, মাছ শিকারে এমন জাল নৌকা তাঁদের চোখে পড়েনি। এলাকায় মাছ শিকারের এমন নৌকা এই প্রথম। নৌকা থেকে মাছও ভালো পাওয়া যায়। তিনিসহ এলাকার অনেকেরই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় নৌকাটি চোখে পড়ে।
কৃষক আসলাম হোসেন বলেন, জাল নৌকার ওজন কম ও তৈরিতে ব্যয়ও কম। নদীর তীরে বাস করা পরিবারের সদস্যরা যদি মৌসুমি মাছশিকারি হয়, তাহলে এ ধরনের জাল নৌকায় তাঁদের সংসারে উপকারে আসতে পারবে।

কাশিয়াবালার পাশেই বিনোদপুর গ্রাম। এই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সাগর আলী বলেন, তাঁদের গ্রামের দুই পাশেই নদী রয়েছে। একটি পূর্ব পাশে বাঙ্গালী নদী ও পশ্চিমে করতোয়া নদী। বারো মাসই নদীতে পানি থাকে। এই নদী দুইটি ঘিরেই মাছ শিকার চলে বারো মাস। এর মধ্যে মৌসুমি মাছশিকারিই বেশি দেখা মেলে। মৌসুমি মাছশিকারিরা বিভিন্ন জাল, বড়শি, বাঁশের চৌঙা, সুতিজাল, দাঁড়কি, খোড়া জালসহ বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার করেন। কিন্তু গ্রামের লোকজন এই জাল নৌকা প্রথম দেখলেন।