'আর কত চিল্লানো যায়? কে শোনে কার কথা'

লঞ্চে যাত্রী ওঠার ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। আজ সোমবার দুপুরে দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটে। ছবি: এম রাশেদুল হক
লঞ্চে যাত্রী ওঠার ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। আজ সোমবার দুপুরে দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটে। ছবি: এম রাশেদুল হক

লকডাউনের কারণে রাজধানীতে যেতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম রুট রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে দীর্ঘদিন ধরে ছিল না হইহুল্লোড়। ছিল না গাড়ির আওয়াজ। হকারদের চিৎকার-চেঁচামেচি আর দালালদের তৎপরতাও ছিল না। কিন্তু আজ সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু হওয়ায় আগের সেই চেনা দৃশ্যে ফিরে গেছে দৌলতদিয়া ঘাট।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটে অপেক্ষা করে দেখা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে গণপরিবহন আসছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে দূরপাল্লার পরিবহনের লাইন লম্বা হচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রায় দুই কিলোমিটার ছাড়িয়ে ঢাকাগামী কয়েক শ গাড়ির লাইন তৈরি হয়। বেশির ভাগই দূরপাল্লার বিভিন্ন কোম্পানির পরিবহন। গাড়ির অধিকাংশ দুজনের সিটে একজন করে যাত্রী বসা ছিল। মাঝেমধ্যে পাশাপাশি দুজনকেও দেখা যায়। তবে তারা একই পরিবারের।

চালক ও তাঁদের সহকারীদের কিছুটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায়। কিছু নিম্নমানের পরিবহন বা লোকাল বাসে পাশাপাশি যাত্রী বসতে দেখা গেছে।

গোপালগঞ্জ থেকে আসা ঢাকাগামী প্রজাপতি নামক নিম্নমানের একটি বাস ফেরিতে উঠছিল। বাসটির ভেতরে সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি। পাশাপাশি দুজন করে যাত্রী বসে ছিল। অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক। ক্যামেরা তাক করতেই তাড়াহুড়ো করে কয়েকজন মুখে মাস্ক পরে। আবার কয়েকজন যাত্রী পাশ থেকে উঠে খালি সিটে গিয়ে বসে।

বাসটির তত্ত্বাবধায়ক জানালেন, গোপালগঞ্জ থেকে রির্জাভ কয়েকজন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে গাড়িটি। বাসটি ঢাকা শহরে লোকাল বাস হিসেবে চলে। লকডাউনের কারণে আটকে পড়ায় এত দিন ঢাকায় যেতে পারেনি।

রাজবাড়ীর একটি পরিবহনের ঘাট তত্ত্বাবধায়ক মনির হোসেন, ফরিদপুরের গোল্ডেন লাইন পরিবহনের ঘাট তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালামসহ কয়েকজন বসে ছিলেন টার্মিনাল এলাকায়। দীর্ঘদিন পর আবার তাঁরা এসেছেন ঘাটে ডিউটি করতে। তাঁরা বললেন, প্রায় দুই মাসের মতো বাড়িতেই বসা ছিলেন। সীমিত পরিসরে বাস চালু হওয়ায় তদারকি করতে ঘাটে আসতে হয়েছে। অনেক দিন পর সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, বেশ ভালো লাগছে। তাঁরা চেষ্টা করছেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে।

লঞ্চ থেকে নামতেও একই অবস্থা। বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক বিভাগের কর্মী তদারকির চেষ্টা করেও ব্যর্থ। দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটে। ছবি: প্রথম আলো
লঞ্চ থেকে নামতেও একই অবস্থা। বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক বিভাগের কর্মী তদারকির চেষ্টা করেও ব্যর্থ। দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটে। ছবি: প্রথম আলো

গতকাল রোববার থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়াসহ দেশের বিভিন্ন রুটে নৌযান চলাচল শুরু হলেও এদিন যাত্রীর চাপ তেমন ছিল না। আজ থেকে গণপরিবহন চালু হওয়ায় যাত্রীদের চাপ পড়তে শুরু করেছে। লঞ্চঘাটে পন্টুনের সঙ্গে হাতেগোনা কয়েকটি লঞ্চ বাঁধা। যাত্রী আসামাত্র দ্রুত লঞ্চে তুলেই পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে।

ঘাটে বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক পরিদর্শক আফতাব হোসেন, লঞ্চ মালিক সমিতির ঘাট তত্ত্বাবধায়ক নুরুল আনোয়ারসহ অনেকে যাত্রীদের দুই হাত ধুয়ে লঞ্চে ওঠার অনুরোধ করছিলেন। কিন্তু লঞ্চে ওঠার পর বা লঞ্চ থেকে নামার সময় যাত্রীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নাই। শরীর ঘেঁষাঘেঁষি করে ওঠানামা করছে তারা।

ক্ষোভে আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘আর কত চিল্লানো যায়? সারা দিন এই প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমের মধ্যে যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ওঠানামা করতে বলছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা!’