করোনার থাবা প্রতিবন্ধী মহিউলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়

খুলনা নগরের মিয়াপাড়া পাইপের মোড়ে থাকেন মহিউল ইসলাম। শারীরিক প্রতিবন্ধী তিনি। বাড়ির বারান্দায় কম্পিউটারের কাজ ও মুঠোফোন রিচার্জের দোকান তাঁর। এই ক্ষুদ্র ব্যবসার সীমিত লাভ, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ঘরের ভাড়া আর প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে কোনো রকমে চলে তাঁর চারজনের সংসার। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দোকানে তেমন লেনদেন নেই। ভাড়াটেরা আপাতত ভাড়া দিতে পারছেন না। এমন নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে এসএসসিতে একমাত্র মেয়ের জিপিএ–৫ পাওয়া তাঁকে আনন্দ দিয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কাও বেড়েছে।


মহিউলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোটবেলায় হামের পর তাঁর হাত–পা অচল হয়ে যায়। সেই থেকে প্রতিবন্ধী জীবন তাঁর। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু দমে যাননি তিনি। নিজের চেষ্টায় লেখাপড়া শেখেন। কম্পিউটারের ছোটখাটো কাজ নিজেই করেন। আগে লোকজন দোকানে আসতেন, কথা হতো, ভালো লাগত। এখন সবাই শঙ্কিত। দোকানে তেমন কেউ আসেন না। কাজ নেই, নিজেকে অনেক বেশি নিঃসঙ্গ লাগে। এর মধ্যে নিজেকে নিরাপদ রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করার কথা জানালেন। তাঁর ভাষায়, 'আমরা যে রকম মানুষ, কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে আমাকে নিয়ে তো অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে। পেটের চিন্তা, নিরাপত্তার চিন্তা, সবই করতে হচ্ছে।'


মহিউল কোনো ধরনের সাহায্য–সহযোগিতা পাননি বলে জানালেন। বিষয়টি তিনি খুলনা জেলা প্রশাসকের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'সবাই বাইরে থেকে বলে আমার বাড়ি আছে। আমার ভেতরের কষ্টটা কেউ দেখে না। কত কষ্ট করে চলতে হয় তা কেউ জানে না। জানি না সামনে কী হবে! করোনা সব বদলে দিলো। মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পেয়েছে। অনেক আনন্দ হয়েছে। মেয়েকে ঘিরে সব স্বপ্ন আমার। ওর ভর্তি, টিউশন, পড়াশোনা—সব কেমনে হবে? সঞ্চয়ও নেই।টাকার অভাবে মেয়েকে ঘিরে আমার সব স্বপ্ন হারিয়ে যাবে কিনা, এখন সেই শঙ্কায় থাকি।'