রৌমারী সীমান্তে ভারতীয় হাতির তাণ্ডব, কৃষকেরা দিশেহারা

গত এক সপ্তাহ থেকে সন্ধ্যার পর হাতির দল কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে। রাতভর ধান খেয়ে ও নষ্ট করে ভোরে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান করে। ছবি: সংগৃহীত
গত এক সপ্তাহ থেকে সন্ধ্যার পর হাতির দল কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে। রাতভর ধান খেয়ে ও নষ্ট করে ভোরে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান করে। ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে আবারও ভারতীয় বন্য হাতির তাণ্ডব। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করেছে পাকা ধান। চোখের সামনে সোনালি ফসল ঘরে তুলতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সীমান্তবর্তী কৃষকেরা। এ অবস্থায় ঢাকঢোল বাজিয়ে ও আগুন জ্বালিয়ে হাতি তাড়াতে ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষকেরা।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, এক সপ্তাহ আগে ভারতের কালাইয়ের চর পাহাড় থেকে ২৫টি হাতির দল আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ১০৭৭ দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রৌমারী সীমান্তে প্রবেশ করে। এসব বন্য হাতির দল উপজেলার বরাইবাড়ী, বকবান্দ, খেওয়ার চর, আলগারচর,ঝাউবাড়ী, চুলিয়ারচরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার ফসল খেয়ে ও পা দিয়ে পিষে নষ্ট করে ফেলছে। উঠতি ফসল হারিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এলাকার কৃষকেরা।
আজ বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক একর জমির ফসল খেয়ে ফেলেছে হাতির দল। পায়ে মাড়িয়ে নষ্ট করেছে আরও বেশি। ভয়ে কৃষকেরা জমিতে নেমে ধান কাটতে পারছেন না। অধিকাংশ জমিতে পানি জমে আছে।

ঝাউমারী চরের সাবেক মেম্বার আয়নাল হক বলেন, কালাইয়ের চরে হাতির খাবার না থাকায় এক সপ্তাহ থেকে সন্ধ্যার পর হাতির দল কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে। রাতভর ধান খেয়ে ও নষ্ট করে ভোরে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান করে। প্রায় ৩ থেকে ৪ বিঘা জমির ধান নষ্ট করেছে বলে জানান তিনি।

একই এলাকার কৃষক আলী হোসেন বলেন, প্রতিবছর হাতির দল ধান পাকার সময় খাবার না পেলে কৃষকের ঘরবাড়িতেও হামলা চালায়। তিনি বলেন, কালাইয়ের চর থেকে সীমান্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার। ভারতীয় এ অংশে জমিতে কোনো ফসল নেই। ক্ষুধার্ত হাতির দল বাংলাদেশে ছুটে আসে ফসল খেতে।

পার্শ্ববর্তী বকবান্দার চরের কৃষক মোশারফ হোসেন কান্না চেপে রেখে বলেন, ‘আমি শ্যাষ হইয়া গেছি গো ভাই। হাতি আমার দুই একর জমির ধান নষ্ট করেছে। আনুমানিক ১৮৭ মণ ধান পেতাম। এখন কেমন কইরা চলব।’

একে অবস্থা বরাইবাড়ী চরের কৃষক আবদুল খালেক, মজিবর রহমানসহ অনেকের। সীমান্ত ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রতিবছর হাতির দল আমাদের ক্ষতি করলেও সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

রৌমারী এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার বাড়ি সীমান্ত এলাকায়। কৃষকদের কষ্ট আমি বুঝি। নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত। আমি সংসদ সদস্য থাকার সময়ে সংসদে দাঁড়িয়ে প্রস্তাব রেখেছিলাম সীমান্তে পাঁচ কিলোমিটার জিআই তারের বেড়া লাগাতে।’

রৌমারী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, ‘আমি এলাকায় গিয়েছিলাম। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ বিঘা জমির ধান নষ্ট করেছে।’