সিলেটে করোনা চিকিৎসায় যুক্ত হলো নর্থ ইস্ট হাসপাতাল

সিলেটে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী ভর্তির কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানিয়ে আসছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। তাঁদের এ আহ্বানে সবার আগে এগিয়ে এল সিলেটের নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ১ থেকে ৩ জুন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের পর গতকাল বৃহস্পতিবার পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চার দিনে হাসপাতালে কোভিডে আক্রান্ত ও সন্দেহভাজন রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৯ জন।

সরকারিভাবে সিলেটে কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় এত দিন পর্যন্ত ১০০ শয্যার সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল ব্যবহার করা হচ্ছিল। পুরোনো অবকাঠামোর এই হাসপাতালে অস্থায়ীভাবে ১১টি আইসিইউ শয্যাও স্থাপন করা হয়েছে শুধু করোনা চিকিৎসায়। পাশাপাশি সিলেট বিভাগের তিনটি জেলার হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোগুলোতে আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছে। সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ল্যাবে পরীক্ষা শেষে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত করা হচ্ছে। শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ায় সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি ছিল বলে জানিয়েছে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা দপ্তরগুলো।

সিলেটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে চারটি। এর মধ্যে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নগরীর দক্ষিণ সুরমার চণ্ডীপুল এলাকায় বড় পরিসরে স্থাপিত। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসার একটি শাখাও রয়েছে। সাধারণ রোগীদের জন্য বড় পরিসরের একটি ভবনকে করোনা রোগীদের ভর্তি কার্যক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

কোভিড রোগী ভর্তি কার্যক্রম তদারক করতে প্রশাসনিক দপ্তরও গঠন করা হয়েছে। ওই দপ্তর সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ১০ জন চিকিৎসক, ২০ নার্স ও অন্যান্য স্টাফ রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকবেন। তাঁদের আবাসনে মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের একটি ভবন আলাদা করে রাখা হয়েছে।

প্রশাসনিক দপ্তর সূত্র জানায়, হাসপাতালের দুটি ভবনের মধ্যে একটি ভবনে ২০০টি শয্যা কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি আইসিইউ শয্যাও আছে। ভবনটিকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের জন্য একটি ওয়ার্ড, শনাক্ত হওয়া রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড এবং সুস্থতার দিকে যাওয়া রোগীদের জন্য ‘রিকভারি ওয়ার্ড’ করা হয়েছে।

নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনা করে বেসরকারিভাবে করোনার চিকিৎসায় আমরাই প্রথম এগিয়ে এসেছি। আশা করছি, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবায় সরকারি উদ্যোগের সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোগ আমাদের মাধ্যমেই আরও অগ্রসর হবে।’ চিকিৎসার খরচসহ অন্যান্য ব্যয় সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য হাসপাতালটি করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। পরে চাইলে সেটা আরও বাড়ানো যেতে পারে। সরকার এখানকার চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের আনুষঙ্গিক খরচসহ অন্যান্য খরচ বহন করবে। এ বিষয়ে একটি চুক্তি সই ও চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।

সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, সিলেটে করোনার চিকিৎসায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর মধ্যে বড় পরিসরে রোগী ভর্তি ও আইসিইউ সুবিধা নিয়ে প্রথম নর্থ ইস্ট হাসপাতাল এগিয়ে এসেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনার চিকিৎসাসেবায় ব্যয়–সম্পর্কিত একটি চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ই সিদ্ধান্ত নেবে।