জাবিতে হলের নির্মাণকাজ শুরু, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর একাংশের প্রতিবাদ

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বন্ধ থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের তিনটি নতুন হলের নির্মাণকাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার ‘চুক্তি ভঙ্গ করে’ এ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে বলে মনে করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ।
শনিবার ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ এবং বিএনপি, বাম ও আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের একাংশের জোট ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’ পৃথক বিবৃতিতে এর প্রতিবাদ জানায়।
সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের বিবৃতিতে বলা হয়, আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অর্থ লুটপাটের উদ্দেশ্যে ভঙ্গ করে ছেলেদের তিনটি হলের কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বরাবরের মতো উপাচার্য তাঁর খেয়ালখুশিমতো হলের স্থান নির্ধারণ করেছেন।
শিক্ষকদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, উপাচার্যের উচিত ছিল ক্যাম্পাস এবং দেশবাসীর ওপর মহাদুর্যোগের প্রকোপ কীভাবে লাঘব করা যায়, সে বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করা। উচিত ছিল এ ধরনের দুর্যোগের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় গবেষণাগারে স্থাপিত একাধিক পিসিআর মেশিনে কীভাবে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা। অথচ সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে তড়িঘড়ি করে সবার দৃষ্টি এড়িয়ে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ছাত্রদের হল নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে।’
এদিকে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মিখা পিরেগু ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হক স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, মেনে নেওয়া দাবি–দাওয়া বাস্তবায়ন না করে নির্মাণকাজ চালানো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজনের সঙ্গে স্পষ্ট প্রতারণা। উদ্ভূত যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। গত বছরের ৩০ মে এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৫টি হলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। এসব হল নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানে প্রায় ১ হাজার ২০০ গাছ ছিল। এই গাছ কাটার প্রতিবাদ ও প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা ‘অপরিকল্পিত’ দাবি করে আন্দোলন করতে শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। এর মধ্যেই উপাচার্যের বাসভবনে বৈঠক করে প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ভাগাভাগি করে দেওয়ার অভিযোগে ওই বছরের ২৩ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরদিন থেকে টাকা লেনদেনের অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসসহ তিন দফা দাবিতে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক শেষে ছেলেদের তিনটি হলের স্থান পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) নুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের নতুন অর্থবছর শুরু হচ্ছে সামনে। উন্নয়ন প্রকল্পের এই বাজেটের কাজ নতুন অর্থবছরের আগে শুরু করতে না পারলে হিসাব-নিকাশে ঝামেলা হতে পারে। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করারও একটা তাগিদ আছে। এসব দিক বিবেচনা করে আমাদের উপাচার্য হল নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছেন।’
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমা ও উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রের দাবি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা ও উন্নত মানের চিকিৎসা কেন্দ্রের দাবি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন মেডিকেল সেন্টার নিশ্চিত করার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানায়।