কুয়েতে সাংসদ আটকের ঘটনা লজ্জাজনক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ফাইল ছবি
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ফাইল ছবি

লক্ষ্মীপুর–২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলকে কুয়েতে আটক করার ঘটনাকে 'লজ্জাজনক' ও 'দুর্ভাগ্যজনক' বলে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তাঁর মতে, সারা বিশ্ব যখন মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, এমন সময়ে সাংসদের আটকের খবর অনভিপ্রেত।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ রাতে প্রথম আলোকে জানান, কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম লক্ষ্মীপুরের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলামকে আটকের বিষয়টি টেলিফোনে ঢাকায় জানিয়েছেন। যদিও কুয়েতের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রোববার পর্যন্ত কিছু জানায়নি।
শনিবার রাতে কুয়েত সিটির মুশরিফ আবাসিক এলাকার বাসা থেকে কুয়েত সিআইডির কর্মকর্তারা কাজী শহিদকে তাদের দপ্তরে নিয়ে যায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুয়েত থেকে রাষ্ট্রদূত আমাকে জানিয়েছেন লক্ষীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম আটক হয়েছেন বলে শুনেছেন। সেখানকার সিআইডি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। সাংসদ কুয়েতে একটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান– যিনি কুয়েতের নাগরিক, সাংসদকে জামিনে মুক্ত করার জন্য তিনি চেষ্টা করছেন। সাংসদকে কেন নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে কুয়েতের কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি বলেও রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন। তবে ওনার বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচার ও মানব পাচারের অভিযোগ কেউ দিয়েছে। তাছাড়া যেহেতু বড় ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করেন, সেখানে তাঁর সঙ্গে অন্যদের ব্যবসায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতাও রয়েছে।
আব্দুল মোমেন বলেন, এই ঘটনা সত্যি হয়ে থাকলে খুবই দুঃখজনক। বিদেশে গিয়ে একজন সাংসদ এ ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়াবেন তা একেবারেই অনভিপ্রেত। এমন সময় এই ঘটনাটা ঘটেছে যখন পৃথিবীর সব দেশ মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। এমন সময়ে সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এতে লজ্জিত।
এদিকে রাত সাড়ে ১১ টায় সবশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদ কুয়েত সিআইডির হেফাজতে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাস ও আরব টাইমস বাংলাদেশের এক সাংসদসহ তিন মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কুয়েতের সিআইডির বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছিল, স্বতন্ত্র এই সাংসদসহ তিনজনের ওই চক্র অন্তত ২০ হাজার বাংলাদেশিকে কুয়েতে পাঠিয়ে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয় করেছে। কুয়েতের গণমাধ্যমগুলো অভিযুক্ত সাংসদের নাম প্রচার করেনি। তবে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযুক্ত সাংসদের নাম কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল। তিনি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ।
কুয়েতের কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর কুয়েতে পৌঁছান কাজী শহিদ। এরপর আসা-যাওয়া করেও সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ করে গত শনিবার সিআইডির তাকে আটক করাটা রহস্যজনক। হয়তো সাম্প্রতিক সময়ে কিছু একটা ঘটেছে। অবশ্য মানব ও মুদ্রা পাচার নিয়ে তিন বাংলাদেশির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে তা নিয়ে কুয়েতের সিআইডি তদন্ত শুরু করেছে।
এদিকে কুয়েত ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে সাংসদ কাজী শহিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।