২৪ বছরেও বিচার হয়নি

কল্পনা চাকমা
কল্পনা চাকমা

পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীনেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দীর্ঘ ২৪ বছরেও না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম। তারা বলছে, এত বছর পরও কল্পনা চাকমা হত্যার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। এই ঘটনা বিচারহীনতার একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ। আর যাঁরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের আন্দোলন করছেন, কল্পনা চাকমা তাঁদের কাছে সংগ্রামের প্রতীক।

কল্পনা চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালের ১১ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগের রাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন তিনি। 

কল্পনার বড় ভাই কালিন্দী চাকমা গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওই রাতে ১০–১২ জনের একটি সশস্ত্র দল কল্পনা চাকমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। ওই সশস্ত্র দলের সঙ্গে থাকা তিনজনকে কল্পনার দুই ভাই কালিন্দী ও লাল বিহারী চাকমা চিনতে পারেন। এ তিনজন হলেন তাঁদের বাড়ির কাছের কজইছড়ি সেনাক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস, গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের (ভিডিপি) প্লাটুন কমান্ডার নুরুল হক ও সালেহ আহম্মদ।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন বাঘাইছড়ি থানায় এ ঘটনায় মামলা হয়। থানার তৎকালীন ওসি শহিদউল্ল্যা নিজেই মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। এরপর একে একে ৩৩ জন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হন। এভাবে ১৪ বছর পার হয়। কিন্তু তদন্তের কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরপর ৩৪তম তদন্ত কর্মকর্তা, ওই থানার উপপরিদর্শক ফারুক আহম্মদ ‘পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে না’ দাবি করে ২০১০ সালের ২১ মে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। পরে বাদীর নারাজি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাঙামাটির চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি সিআইডির মাধ্যমে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। দুই বছর পর ৩৫তম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক মো. শহীদুল্লাহ ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে কল্পনা চাকমা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে বা উদ্ধার করা সম্ভব হইলে যথানিয়মে মামলাটির পুনরায় তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।’

মামলার বাদী ও কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালিন্দী চাকমা সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে রাঙামাটির আমলি আদালতে নারাজি আবেদন দেন। মামলার বাদির আইনজীবী জুয়েল দেওয়ান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৬ সালে আদালত রাঙামাটির পুলিশ সুপারকে এ মামলার তদন্ত ভার দেন। রাঙামাটির পুলিশ সুপার সৈয়দ তারিকুল হাসান দুই বছর পর ২০১৮ সালে কারও বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ প্রতিবেদনেও নারাজি দেন কল্পনার ভাই। এ বিষয়ে কয়েক দফা শুনানি হয়। এরপর রাঙামাটির অতিরিক্তি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাবরিনা আলী প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন। এসব নথি দাখিল সাপেক্ষে নারাজি আবেদনের ব্যাপারে অধিকতর শুনানি হবে বলে নির্দেশ দেন। তবে দুই বছরেও শুনানি হচ্ছে না।

এদিকে কল্পনা অপহরণের বিচারের দাবিতে খাগড়াছড়ি শহর ও রাঙামাটির কাউখালিতে আলোচনা সভার আয়োজন করে হিল উইমেন্স ফেডারেশন। কল্পনা চাকমা অপহরণের দ্রুত বিচার দাবিতে বিবৃতি দেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি রওশন আরা ও সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসু।