জাবিতে এক রাতেই ছাত্রী হলের ১৭ কক্ষে চুরি

করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রীতিলতা আবাসিক হলের ১৭টি কক্ষে চুরির ঘটনা ঘটেছে।

চুরির বিষয়টি হল প্রশাসনের নজরে আসে গতকাল শুক্রবার সকালে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২ টার পর এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে হল কর্তৃপক্ষ। চুরির ঘটনা তদন্তে সংশ্লিষ্ট হলের আবাসিক শিক্ষক শাশ্বতী মজুমদারকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।

প্রীতিলতা হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিনের মতো হলের প্রতিটি তলা তদারকি করা হয়। সেসময় চুরির কোন লক্ষণ চোখে পড়েনি। তবে শুক্রবার সকালে হলের 'এ' ব্লকের ২০১, ২০৩, ২১১, ২১৬, ২১৭, ৩০১ ও ৩০৫ এবং 'বি' ব্লকের ১১৩, ২০২, ২১২, ২১৩, ২২২, ৩০৯, ৪০৩, ৪১২ ও ৪২১ নম্বর কক্ষসহ একটি স্টোররুমের দরজার তালা খোলা এবং তালার সঙ্গে চাবি ঝুলতে দেখা যায়। বিষয়টি নজরে আসার পর সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ ওইসব কক্ষে নতুন করে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকতেও কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে সে ব্যাপারে হল প্রশাসন কিছু জানে না বলে জানিয়েছে।
হলের আবাসিক ছাত্রী মনিকা ইয়াসমিন চুরি যাওয়া কক্ষগুলোর একটিতে থাকতেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'গত ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র ১৫ দিনের বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেসময় অল্প কয়েকদিন ছুটির কথা ভেবে প্রায় সব জিনিসপত্রই হলে রেখে এসেছি। এর মধ্যে আমার টিউশনির ৫ হাজার টাকা এবং আমার রুমমেটের ২৫ হাজার টাকা, বেশকিছু পছন্দের শাড়িসহ নিত্য ব্যবহার্য সব জিনিসপত্রই ছিল। এসব জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেলে বেশ মুশকিলে পড়ে যাব।'
হলের আরেক আবাসিক ছাত্রী আশরেফুল নাহার অভিযোগ করেন, 'ছোটখাটো চুরি আগেও হয়েছে। রমজানের ছুটিতেও চুরি হয়েছে গণরুমে। লম্বা ছুটিতে গণরুম খোলাই পরে থাকে। প্রায়ই বারান্দা থেকে জামাকাপড় চুরি হয়। প্রশাসনকে এসব বিষয়ে বারবার বলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।'
চুরির বিষয়ে প্রীতিলতা হলের প্রাধ্যক্ষ আয়শা সিদ্দিকা প্রথম আলোকে বলেন, 'শুক্রবার সকালে হলের দুটি ব্লকের ১৭টি কক্ষের দরজা খোলা অবস্থায় পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট কক্ষের ছাত্রীদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বাকিদেরও জানানো হচ্ছে। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি কাজ করছে। আশা করছি শিগগিরই বিষয়টা খোলাসা হবে।'

হলের নিরাপত্তা নিয়ে ছাত্রীদের নানা অভিযোগ

প্রীতিলতা হলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নানা অভিযোগ জানিয়েছেন হলের আবাসিক ছাত্রীরা। এসব অভিযোগের বিষয়ে হল প্রশাসনকে বারবার অবহিত করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস ছাড়া দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ তাঁদের।
হলের আবাসিক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিদিতা তাহসিন প্রথম আলোকে বলেন, 'হলে সিসিটিভি বসানো হয়েছে কিছুদিন আগে। সেসব কাজ করেনা। হলে চুরির ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। মেয়েদের হলে বহিরাগত প্রবেশের ক্ষেত্রে নিয়ম থাকলেও নিয়ম মানা হয়না। যে কেউ চাইলেই হলে ঢুকে যেতে পারে।'
হলের আরেক আবাসিক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'হল প্রশাসনের কাছে ছাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে একটু উদাসীনতা বরাবরই লক্ষ্য করা গেছে। সম্প্রতি যৌন হয়রানির দায়ে একজন গার্ডকে চাকরিচ্যুত করতে অভিযোগকারীকে কঠোর আন্দোলন করতে হয়েছে। খুব সহজেই নাম-পরিচয় ব্যতীত যেকেউ হলে ঢুকে যেতে পারে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এই হলে থেকেছেন বছরের পর বছর এমন রেকর্ডও আছে।'
এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রীতিলতা হলের প্রাধ্যক্ষ আয়েশা সিদ্দিকা প্রথম আলোকে বলেন, 'সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট। আমরা সেসব ঠিক করার চেষ্টা করছি। এছাড়া ছাত্রীদের অন্য যেসব অভিযোগ আছে সেসব বিষয়ে আমরা সচেতন, শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'