চাঁদপুরের রক্তের বন্ধুরা

প্রসূতি নারীর অস্ত্রোপচারে রক্ত দান করছেন ‘সেক্রেড হার্ট’র এক সদস্য। সম্প্রতি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
প্রসূতি নারীর অস্ত্রোপচারে রক্ত দান করছেন ‘সেক্রেড হার্ট’র এক সদস্য। সম্প্রতি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

এই করোনাকালে এক ব্যাগ রক্ত জোগানো যে কত কঠিন, তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। চরম দুঃসময় পার করা মানুষগুলোকে রক্তের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার একদল তরুণ। গত ৩ মাসে ৩৫ প্রসূতি নারীর অস্ত্রোপচারে অর্ধশতাধিক ব্যাগ রক্ত দেন তাঁরা। আরও ১০ নারীর অস্ত্রোপচারে ১ ব্যাগ করে রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। এ রকম রক্তের বন্ধুত্ব গড়েছেন অনেকগুলো পরিবারের সঙ্গে। প্রসূতি নারীর স্বজনদের বিনা মূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়সহ আরও অনেক সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন এই তরুণেরা।

ওই তরুণদের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকায়। স্নাতক শেষ করে কেউ টিউশনি করছেন, কেউ ছোটখাটো ব্যবসা করেন। ‘স্যাক্রেড হার্ট’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এসব কাজ করছেন তাঁরা। সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সদস্য মো. হাবিব (২৪) বলেন, তাঁর সংগঠনের কর্মী ৪০ জন। তানভীর আহম্মেদ, আশরাফুল জাহান, ফয়সাল আহম্মেদ, ইমন সরকার, মুহিন আহম্মেদ, মো. শাহরিয়ার, বদিউল আলমসহ ২০ সদস্য এখন সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বাড়ি ও বাজারে গিয়ে শারীরিক দূরত্ব মানতে এবং মাস্ক পরতে মানুষকে সচেতন করছেন এই তরুণেরা। বিলি করেছেন প্রচারপত্র। প্রশাসন ও সচ্ছল ব্যক্তিদের দেওয়া খাদ্যসামগ্রী নিজেদের উদ্যোগে পৌঁছে দিচ্ছেন গরিবের বাড়ি। একাধিক অসহায় মানুষের তথ্য প্রশাসনের নজরে এনে সহায়তা পাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।

তরুণেরা জানান, করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের তথ্য প্রশাসনকে সময়মতো জানাচ্ছেন। কারও শরীরে উপসর্গ থাকার তথ্য পেলে তাঁর মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে ফোনে তাঁকে সরকারি হেল্প লাইনের একাধিক নম্বর জানিয়ে দেন। বিষয়টি স্থানীয় চিকিৎসকদেরও নজরে আনেন। এ ছাড়া বেশ কিছু প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি) ও জেএসসি পরীক্ষার্থীকেও নোট-সাজেশন তৈরি করে বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন বিনা পয়সায়। আশরাফুল বলেন, ‘গত ৪ জুন রাত দেড়টার দিকে জানতে পারি, হাসপাতালে এক প্রেগনেন্ট মহিলার জন্য জরুরিভাবে দুই ব্যাগ রক্তের দরকার। অঝোর বৃষ্টি। রাতের অন্ধকারে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে এক কিলোমিটরা পথ হেঁটে গিয়ে রক্ত দিলাম। রাতে সেখানেই থেকে যেতে হলো।’

ফরিদা আক্তার নামে সদ্য মা হওয়া ওই নারী বলেন, ‘এই সময়ে ভয়ে কেউ হাসপাতালে আসতে চান না। রক্তদাতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ঝুঁকি নিয়েও ওই তরুণেরা যেভাবে রক্ত দিতে এসেছেন, তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানানোর কোনো ভাষা নেই। তাঁদের জন্য রইল দোয়া।’

ইউএনও ফাহমিদা হক বলেন, সংক্রমণের ঝুঁকি সত্ত্বেও করোনাকালে তাঁরা যেভাবে মানুষের সেবা দিচ্ছেন, তা দৃষ্টান্ত। তাঁরা করোনাকালের পরীক্ষিত যোদ্ধা।