দুই বন্য হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু

বান্দরবানের লামার ফাঁসিয়াখালীতে মৃত হাতির ময়নাতদন্ত করছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা। গতকাল বিকেলে।  ছবি: সংগৃহীত
বান্দরবানের লামার ফাঁসিয়াখালীতে মৃত হাতির ময়নাতদন্ত করছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা। গতকাল বিকেলে। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফের পর এবার বান্দরবানের লামা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বন্য হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

লামার ফাঁসিয়াখালীতে গত শুক্রবার রাতে বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী হাতিটিকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্থানীয় মানুষের ভাষ্য। আর চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে দিন দশেক আগে একটি হাতিকে হত্যা করা হয়েছে বিষ প্রয়োগ করে। সম্প্রতি এ ঘটনা প্রকাশ হয়েছে।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের (খালকুল্যাখোলা এলাকার) সদস্য আবদুর রহিম জানান, গতকাল শনিবার সকালে তাঁরা স্থানীয় একটি খালে মৃত হাতিটি পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভবত খালের খাড়া ও উঁচু পাড় থেকে পানিতে পড়ে গেছে। মৃত হাতির পিঠে বৈদ্যুতিক শকের মতো কালো দাগ ছাড়া কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই। এ জন্য ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক ফাঁদে হাতিটি স্পৃষ্ট হয়েছে। দিগ্‌বিদিকশূন্য হয়ে পালানোর সময় খালে পড়ে আর উঠতে পারেনি।

বৈদ্যুতিক ফাঁদে ও পানিতে পড়ে গত বছরের নভেম্বরে লামার ফাঁসিয়াখালীতে দুটি বাচ্চাসহ চারটি হাতির মৃত্যু হয়েছিল। বৈদ্যুতিক ফাঁদে হাতি হত্যার দায়ে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ নামের একজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

তবে বন বিভাগের লামা সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা নুরে আলম হাফিজ জানান, পানিতে পড়ে হাতিটির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। পিঠে থাকা কালো দাগ বিদ্যুতের শক বলে মনে হয়নি। তবে এত ছোট খালে পড়ে কীভাবে হাতিটির স্বাভাবিক মৃত্যু হলো সে বিষয়ে তিনি জবাব দিতে পারেননি।

বাঁশখালীতে হাতি ‘হত্যা’

১০ দিন আগে বাঁশখালীর বৈলছড়ি ইউনিয়নের অইব্যার খীল নামক পাহাড়ি এলাকায় একটি বন্য হাতি মাটির নিচে পুঁতে ফেলা হয়। হাতিটিকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

>বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে লামার হাতিটিকে হত্যার অভিযোগ
বাঁশখালীতে হত্যা করা হয়েছে বিষ প্রয়োগ করে

বৈলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন বলেন, হাতিটিকে হত্যা করে গোপনে পুঁতে ফেলা হয়। বনখেকোরা ঘৃণিত এ কাজ করেছে।

হাতিটিকে পুঁতে ফেলার স্থানে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ১৫ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি গর্ত ঘাস ও পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা। সেখান থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। মাছি উড়ছে। এটির পাশেই মাল্টার বাগান। বাগানের চারপাশে লোহার তারের বেড়া রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন জানান, হাতি তাড়াতে এসব লোহার বেড়ায় বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়।

তবে স্থানীয় ব্যক্তি মো. আবদুল্লাহ বলেন, পাহাড়ে কাঁঠালের বাগানে বিষ দেওয়া হয়েছিল। বিষ খেয়ে বন্য হাতিটি মারা যায়। হাতিটি মারা গিয়ে বেশ কয়েক দিন পড়ে ছিল। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় লোকজন পুঁতে ফেলেন। এলাকায় হাতির উৎপাত বেশি।

বন বিভাগের সাধনপুর বিট কর্মকর্তা জলিলুর রহমান বলেন বিষ দিয়ে হাতিটি মারা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। 

টেকনাফে হাতির ময়নাতদন্ত

প্রতিনিধি, টেকনাফ জানান, কক্সবাজারের টেকনাফের হাতিটি বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মারা গেছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। টেকনাফ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক আহমেদ জানান, গতকাল সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। বন্য হাতির মৃত্যুতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।