ইউনাইটেডে আগুনে রোগীদের মৃত্যু রোধ করা যেত: তদন্ত প্রতিবেদন

ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে শীতাতপ যন্ত্র থেকে ধোয়া দেখামাত্র প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা, ইমার্জেন্সি অ্যালার্ম বাজানো, রোগী অপসারণ ও হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ দলকে উপস্থিত হতে জরুরি অনুরোধ জানালে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড ও রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো। রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্য এসেছে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ রোববার ওই প্রতিবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পাশাপাশি ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশ ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনও আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ ছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিবেদন দাখিল করে তাদের আইনজীবী। পরে আদালত ২২ জুন পরবর্তী দিন রাখেন।

গত ২৭ মে হাসপাতালটির মূল ভবনের বাইরে আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লেগে লাইফ সাপোর্টে থাকা পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় অবহেলা ও গাফিলতি খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন এবং নিহতদের পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চেয়ে ৩০ মে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিয়াজ মোহাম্মদ মাহাবুব একটি রিট করেন। এর শুনানিতে ২ জুন আদালত হাসপাতালসহ চার কর্তৃপক্ষকে ১৪ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। এ অনুসারে আজ প্রতিবেদন জমা পড়ে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। রিটের পক্ষে আইনজীবী মুনতাসীর উদ্দিন আহমেদ এবং ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান ও কাজী এরশাদুল আলম শুনানিতে ছিলেন।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, 'ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে হাসপাতালের গাফিলতির কথা রয়েছে। রাজউক বলেছে, করোনার জন্য আলাদা আইসেলেশন ইউনিট করার ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি। অগ্নিকাণ্ডের সময় কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো বলে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত রিপোর্টে এসেছে।' হাসপাতালটির আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ইতিপূর্বের নির্দেশ অনুসারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আদালতে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। আদালত ২২ জুন পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্য, তা ছাড়া ওই এসি হতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হতে দেখেও কর্মরত উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে (ডাক্তার, তিনজন নার্স ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী) অগ্নি নির্বাপণের ব্যাপারে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অন্যান্য অগ্নি নির্বাপন সরঞ্জামাদি ব্যবহারে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি বলে প্রতীয়মান হয়। ফলে অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন নির্বাপণে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের গাফিলতির কারণে ঘটনাটি ঘটে বলে তদন্ত কমিটি মনে করে। আরও বলা হয়, ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নি দুর্ঘটনার সময় অগ্নি নিরাপত্তা অফিসার উপস্থিত ছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক হাসপাতালের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে সার্বক্ষণিক ফায়ার সেফটি অফিসার ও অগ্নি নির্বাপনকারী দলের সদস্যদের উপস্থিত থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল বলে কমিটি মনে করে।