'নতুন স্বাভাবিক জীবন' আসবে কবে

এখন বিশ্বের যেসব দেশে সংক্রমণ বেশি এবং ঊর্ধ্বমুখী তার একটি বাংলাদেশ। প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স
এখন বিশ্বের যেসব দেশে সংক্রমণ বেশি এবং ঊর্ধ্বমুখী তার একটি বাংলাদেশ। প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত হওয়ার ১০০তম দিন পূর্ণ হচ্ছে আজ সোমবার। দেশের সংক্রমণরেখা এখনো ঊর্ধ্বমুখী। কবে নাগাদ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে বা পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হবে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। 

যদিও এর আগে গত এপ্রিলে সরকারের জন্য দেশের আটজন জনস্বাস্থ্যবিদ একটা প্রক্ষেপণ তৈরি করেছিলেন। তাতে বলেছিলেন, জুনের শেষ সপ্তাহে দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেকটা স্তিমিত হয়ে আসতে পারে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক আসবে; তবে সেটা হবে ‘নতুন স্বাভাবিক জীবন’। কিন্তু এখন ​বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন সেই স্বাভাবিক জীবন কবে আসবে, সেটা অনিশ্চিত। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। 

ওই আট জনস্বাস্থ্যবিদের মধ্যে একাধিকজনের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তাঁরা বলছেন, এপ্রিলে তাঁরা ওই প্রক্ষেপণ বা পূর্বানুমান করেছিলেন সারা দেশে সাধা​রণ ছুটি বা লকডাউন (অবরুদ্ধ) পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে। এরপর প্রথমে পোশাক কারখানা, তারপর লকডাউন শিথিল করে দোকানপাট এবং ঈদের পর গণপরিবহনসহ সবকিছু খুলে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা মনে করছেন, সংক্রমণ তাঁদের পূর্বানুমানের চেয়ে বাড়বে। কবে নাগাদ নতুন স্বাভাবিক জীবন আসবে তা নির্ভর করছে, সরকার কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নেয় এবং মানুষ কতটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তার ওপর। 

নতুন এই করোনাভাইরাসের উৎ​পত্তিস্থল চীনে পরিস্থিতি দুই মাসে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ আসে। তবে বাংলাদেশে তিন মাস পার করেও বলা যাচ্ছে না​, কবে নাগাদ সংক্রমণরেখা নিম্নমুখী হবে। যত দিন যাচ্ছে সংক্রমণ ততই বাড়ছে। তথ্য–উপাত্ত বলছে, সংক্রমণ শুরুর প্রথম ১০০ দিনে ভারত ও পাকিস্তানে যে পরিমাণে মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ওই দুটি দেশেও এখনো সংক্রমণ বাড়ছে। 

>জুলাইয়ে 'নতুন স্বাভাবিক জীবন'শুরু; এই প্রক্ষেপণ উবে গেছে সবকিছু খুলে দেওয়ার পর। এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।

দেশে গতকাল রোববার পর্যন্ত মোট শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৫২০। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ১৭১ জন। আর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন মোট ১৮ হাজার ৭৩০ জন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা সংবাদ বুলেটিনে গত ২৪ ঘণ্টার হালনাগাদ এসব তথ্য জানান।

দেশে মোট আক্রান্তের ৩১ শতাংশ, অর্থাৎ​ ২৭ হাজার ১২৯ জন শনাক্ত হয়েছেন গত ১০ দিনে। এ সময়ে মারা গেছেন ৩৬০ জন; যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৩১ শতাংশ। ছয় দিন ধরে দৈনিক গড়ে তিন হাজারের ওপরে রোগী শনাক্ত হচ্ছে। 

এখন বিশ্বের যেসব দেশে সংক্রমণ বেশি এবং ঊর্ধ্বমুখী তার একটি বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ—ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের ১০০ দিনে বাংলাদেশে আক্রান্ত বেশি হয়েছে। তবে ওই দুই দেশে চেয়ে বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা কম। দুটি দেশই বাংলাদেশের চেয়ে বড় এবং জনসংখ্যাও বেশি। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভারতে ১০০ দিনে মোট আক্রান্ত ছিলেন ৫৯ হাজার ৬৬২ জন। এর মধ্যে মারা গিয়েছিলেন ১ হাজার ৯৮১ জন। এরপর ভারতে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে দেখা গেছে। দেশটিতে গতকাল ছিল ১৩৬তম দিন। এখন ভারতে মোট আক্রান্ত ৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি। আর পাকিস্তানে ৪ জুন পর্যন্ত, ১০০ দিনে মোট আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮৫ হাজার ২৬৪ জন। মারা গেছেন ১ হাজার ৭৭০ জন। গতকাল পর্যন্ত ওই দেশে মোট আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার। 

বাংলাদেশেও ১০০ দিন পরে সংক্রমণ আরও বাড়ার ইঙ্গিত দৃশ্যমান। দেশে যে আটজন জনস্বাস্থ্যবিদ সরকারের জন্য গত এপ্রিলে প্রক্ষেপণ তৈরি করেছিলেন তাঁদের একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আগে বলেছিলেন, জুনের শেষ নাগাদ দেশে ১ লাখ ২৩ হাজারের মতো মানুষ আক্রান্ত হবে। এখন মনে করছেন আক্রান্ত আরও বাড়বে। সেটা ১ লাখ ৬০ থেকে ৬৩ হাজার হতে পারে। কবে নাগাদ সংক্রমণ কমবে, তা বলা মুশকিল। এখন এলাকাভিত্তিক লকডাউন করা হচ্ছে। এটা পুরোপুরি কার্যকর হলে সংক্রমণ কমবে। কোনো পদক্ষেপ না নিলে এটা আরও বাড়বে।

এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, ‘কবে স্বাভাবিক জীবন আসবে, তার নিশ্চিত জবাব কারও কাছে নেই। হয়তো আগের স্বাভাবিক জীবন আর আসবে না। একটি নতুন স্বাভাবিক জীবন শুরু হবে। যক্ষ্মা, ডেঙ্গুর মতো করোনাভাইরাসও থাকবে। মাঝেমধ্যে সংক্রমণ বাড়বে।’