চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের ১১ নেতা কারাগারে

চুয়াডাঙ্গায় ছাত্রলীগের এক কর্মীর দায়ের করা বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শেখ আমিনুল ইসলামের আদালতে ছাত্রনেতারা উপস্থিত হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তা নাকচ করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।  

কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া ছাত্রনেতারা হলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফ হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী, চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি জাবিদ, যুগ্ম সম্পাদক মাফি, দপ্তর সম্পাদক তাপু, কার্যনির্বাহী সদস্য ডেভিড, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জানিফ, চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিয়া, নির্বাহী সদস্য হাফিজুর রহমান, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমেদ এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষা ও পাঠচক্র সদস্য বুলবুল। এই মামলার এজাহারভুক্ত ৯ নম্বর আসামি ও জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক রিংকু আজ আদালতে হাজির হননি।

আজ ছাত্রলীগ নেতাদের হাজিরার খবর আগে থেকেই জানাজানি হওয়ায় আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদেশের পর বিচারিক হাকিমের কক্ষ থেকে বের হয়ে  প্রিজন ভ্যানে ওঠার আগ পর্যন্ত পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেই ছাত্রনেতারা জাতীয় সংসদের হুইপ ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দারের বিরুদ্ধে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকেন। এ ছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদ হোসেনের নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা শহরের কোর্ট মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করেন। মিছিলটি  বড় বাজার শহীদ হাসান চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এই মিছিল থেকে স্লোগান দেওয়া হয় ‘অবৈধ মামলা মানি না, মানব না’।

ছাত্রলীগ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা শহরের শান্তিপাড়ার বাসিন্দা সুমন হোসেন (২২) হত্যাচেষ্টা মামলায় কারাবন্দী ছাত্রলীগের কর্মী আবদুল মোমিন ২৩ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান। ওই দিন সন্ধ্যায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেনুল হক জোয়ার্দারের নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা কারামুক্ত ছাত্রলীগের কর্মীকে নিয়ে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে ফিরছিলেন। বহরটি শহরের ইমপ্যাক্ট হাসপাতালের কাছে পৌঁছালে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। সে সময় মোহাইমেনুল দাবি করেছিলেন, বোমার স্প্লিন্টারে তিনিসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন।

রাতে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ শহরে মহড়ার পাশাপাশি ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন নেতার বাড়িতে পালটাপালটি হামলা ভাঙচুর,  লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।

বোমা হামলায় আহত দাবি করে ছাত্রলীগের কর্মী খালিদ হাসান ২৪ জানুয়ারি সদর থানায়  বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

 মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফ উদ্দিন ও সাবেক সাধারণ  সম্পাদক জিপু চৌধুরীসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া পাল্টাপাল্টি আরও দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এজাহারভুক্ত আসামি  ১২ ছাত্রনেতাই ২৮ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ছয় সপ্তাহের জন্য জামিন মঞ্জুর করেন। গতকাল সোমবার জামিনের মেয়াদ শেষ হলে আজ মঙ্গলবার নতুন করে জামিন নিতে তাঁদের ১১ জন চুয়াডাঙ্গার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির  হলে তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগ বর্তমানে দুই ধারায় বিভক্ত। এর একটির নেতৃত্বে সভাপতি শরীফ হোসেন এবং অপরটির নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মোহাইমেনুল হক জোয়ার্দার। মামলার আসামিরা সভাপতি ও  সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী।