সংসদে সম্পূরক বাজেট পাস

সম্পূরক বাজেটের বিভিন্ন বিষয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন সরকারি ও বিরোধী দলের সাংসদেরা। এ বিরোধিতার মধ্যেই ২০১৪-১৫ সালের অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে।
সম্পূরক বাজেটের ওপর মোট ২২টি দাবি সংসদে উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ছয়টির ওপর আলোচনা হয়। বিরোধীদলীয় সদস্যদের দেওয়া ছাঁটাই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
সম্পূরক বাজেটের আওতায় ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিপরীতে ৯ হাজার ৫০৮ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে সর্বাধিক প্রায় ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা পরিকল্পনা বিভাগের অধীনে বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে।
বছর শেষ হওয়ার আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে দেওয়া বরাদ্দ কাটছাঁট করার ফলে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার সম্পূরক বাজেটে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের মূল বাজেটটি ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার। সংশোধিত বাজেটে এটির আকার কমেছে ১০ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা।
সংশোধিত বাজেটের আকার কমে আসার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে। আর ৩২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ কমেছে। তবে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি ও বিরোধীদলীয় বেশ কয়েকজন সাংসদ বলেছেন, মন্ত্রণালয়গুলো কেন অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করেছে, সে বিষয়ে সংসদে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে হবে।
আলোচনায় সম্পূরক বাজেটের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘বাড়তি টাকা লাগে নেন, তাতে আমাদের (সংসদের) কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু কেন, কী জন্য বাড়তি টাকা নিচ্ছেন তা বিস্তারিত সংসদকে জানাতে হবে। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে সম্পূরক বাজেট উত্থাপন করা হয়, তাতে বিস্তারিত কোনো তথ্য থাকে না।’ সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘যেসব মন্ত্রণালয় টাকা খরচ করতে পারল না, সেসব “গৌরববান” মন্ত্রীরা কারা? সম্পূরক বাজেটে তাদের নাম নেই কেন? নাম বলতে কি লজ্জা লাগে?’ সম্পূরক বাজেট পাসের প্রচলিত পদ্ধতি সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরে সুরঞ্জিত বলেন, এ বাজেটটিও সংসদে উত্থাপনের আগে ফিন্যান্স কমিটিতে উত্থাপন করা উচিত।
সম্পূরক বাজেটে আর্থিক খাতের জন্য প্রস্তাবিত বাড়তি বরাদ্দ দাবির বিষয়ে প্রশ্ন তুলে সুরঞ্জিত বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেল। অর্থমন্ত্রী সেসব ঘটনার তদন্ত করলে খুশি হতাম। যারা টাকা লুটপাট করল তাদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো, কয়টি মামলা হলো—এসব বিষয় উল্লেখ করে তারপর বাড়তি টাকা বরাদ্দের কথা বললে তাতে কোনো আপত্তি থাকত না।’
এর আগে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনাকালে ফখরুল ইমাম বলেন, তিন মাস পর পর বাজেট বাস্তবায়নের অগ্রগতি সংসদকে অবহিত করার ব্যবস্থা করা উচিত। এ জন্য ত্রৈমাসিক বাজেট পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা দরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাটি এখন চোরাচালানি সংস্থায় পরিণত হয়েছে।
জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ব্যাংক ও শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে রাতারাতি অনেকে ব্যাংক ও টিভি চ্যানেলের মালিক হয়ে গেছেন। অথচ খুঁজলে দেখা যাবে তাঁদের অনেকে নিয়মিত কর দেন না, তাঁদের উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই।
সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্যে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাড়তি যেসব বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ বাজেট-সংশ্লিষ্ট দলিলপত্রে রয়েছে। সরকারি খাতে অর্থের অপচয়ের বিষয়টি স্বীকার করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অতীতের সামরিক সরকারগুলো অপ্রয়োজনীয় কিছু মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করেছে। সেগুলোকে এখন আমাদের টেনে নিতে হচ্ছে। চাইলেও অনেক ক্ষেত্রে সেসব মন্ত্রণালয়কে বাদ দেওয়া যাচ্ছে না।’