বাঁশিবাদক মদিনা এখন রিকশাচালক

বাঁশি বাজাতেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মদিনা মিয়া (৫০)। বাউলগানও গাইতেন। আবার বিভিন্ন স্বরে নানা বিজ্ঞাপন প্রচার করতেন। আর এসব দেখে ও শুনে মানুষজন আনন্দ পেতেন। ক্রমে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। বাঁশি বাজানো আর বাউলগানকে পুঁজি করে আয়ের পথ বেছে নেন তিনি।

এখন মদিনার বাঁশি শোনার মতো কেউ নেই। এলাকায় নেই কোনো পর্যটক। কিন্তু সংসার তো চালাতে হবে। অভাবের তাড়নায়, সংসারের প্রয়োজনে কর্মহীন বাউল মদিনা ৫০ বছর বয়সে ধরেছেন রিকশার হ্যান্ডেল।

বাউল মদিনার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, পারিবারিকভাবেই তাঁরা বাউলশিল্পী। সাত বছর বয়সে মা–বাবার সঙ্গে কমলগঞ্জের বাঘমারা গ্রামে আসেন। আর মূল বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়া হয়নি কোনো দিন। তাঁর সংসারে স্ত্রী ও ছোট মেয়েসহ ছয়জন আছেন।

ছোটবেলা থেকেই শখ করে গান ও বাঁশি বাজাতেন, ধীরে ধীরে গান ও বাঁশি বাজানোটা মদিনার নেশায় পরিণত হয়। আর এই নেশাটা এখন পেশায় পরিণত হয়েছে। কমলগঞ্জের পর্যটন এলাকা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেকসহ বিভিন্ন স্থানে আসা দেশি–বিদেশি পর্যটকদের গান আর বাঁশি শুনিয়ে আনন্দ দিতেন তিনি। তাঁরা খুশি হয়ে যা দিতেন, তা দিয়ে সংসার চলে যেত।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনায় পর্যটনকেন্দ্রগুলো তিন মাস ধরে বন্ধ। ফলে পর্যটক আসাও বন্ধ রয়েছে। অবশেষে সংসার চালাতে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। অল্প কিছু আয় হয় দিনে। খেয়েপরে বাঁচতে তো হবে কোনোভাবে। এখন শুধু ভাবছেন, কবে খুলবে এই পর্যটনকেন্দ্রগুলো, কবে আবার পর্যটকদের ভিড়ে ভরে উঠবে এ জায়গাগুলো। তাহলেই তিনি ফিরে যেতে পারবেন তাঁর পুরোনো পেশায়।

ইকো ট্যুর গাইড আবদুল আহাদ বলেন, পর্যটকেরা মদিনার বাঁশি বাজানো আর বাউলগানে মুগ্ধ থাকতেন। তিন মাস ধরে পর্যটক না আসায় বাঁচার তাগিদে বাধ্য হয়ে তিনি এখন কমলগঞ্জে রিকশা চালাচ্ছেন। তাঁর মতো গুণী শিল্পীকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা উচিত।