যে হাসপাতালে কারও মৃত্যু হয়নি

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো বরিশাল বিভাগেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু। তবে এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল। এখানকার করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও সুস্থ করে তুলছেন একের পর এক রোগী। এখন পর্যন্ত এখানে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র বলেছে, গত ২৮ মার্চ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৭৩ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে বরগুনা বাদে বিভাগের অন্য ৫ জেলার হাসপাতালগুলোর করোনা ওয়ার্ডে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুহার শূন্য। আর রোগীর সুস্থ হওয়ার হার ৭৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন করোনা ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কামরুল আজাদ (৪০) ও তাঁর দল।

প্রথম আলোতে ২৫ এপ্রিল ‘করোনার দিনে টানা এক মাস চিকিৎসা দিচ্ছেন কামরুল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর
দেশজুড়ে আলোচিত হয়। এরপর দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ চিঠি লিখে কামরুল আজাদকে অভিনন্দন জানান।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্র বলেছে, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালটি চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবলসংকটে ধুঁকছে অনেক বছর ধরে। চিকিৎসকের ৪২টি পদের বিপরীতে আছেন তত্ত্বাবধায়কসহ মাত্র ৯ জন। নার্স, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনার সংকটের পাশাপাশি রয়েছে যন্ত্রপাতিসহ সেন্ট্রাল অক্সিজেনের অভাব। মে মাসে ৩৯তম বিসিএস উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে জেলায় পদায়নকৃত ১৬ জন নবীন চিকিৎসককে প্রেষণে এই হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়ার আগে কামরুল আজাদ বলতে গেলে একাই সামলেছেন পুরোটা। এত সংকট সত্ত্বেও গত ফেব্রুয়ারিতে বরিশাল বিভাগে প্রথম করোনা ওয়ার্ড চালু হয় এই হাসপাতালে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড চালুর পর উপসর্গ নিয়ে এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২৪ রোগী। তাঁদের মধ্যে ৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এই ৪৩ জনের মধ্যে ৩৩ জন সুস্থ হয়েছেন। বাকি ১০ জনসহ ২১ জন গত শনিবার পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন।

করোনা চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কামরুল আজাদ বলেন, করোনায় মারাত্মক জটিলতা তৈরি হয় পাঁচ শতাংশ রোগীর। তাই প্রথমেই রোগীদের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ রোগী নির্ণয় করে অক্সিজেন ও প্রোনিং (উপুড় করে শুইয়ে রাখা) করা গেলে সুফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া পুষ্টিজনিত ঘাটতি পূরণ, উপসর্গ অনুযায়ী তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া এবং মানসিক দৃঢ়তা বাড়ানো খুব জরুরি।

বরগুনার এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া করোনা রোগী মো. মিরন প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর শুনে ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের সেবা সাহস জুগিয়েছে।’