ঘুষগ্রহণকারীদের নাম বলেছেন সাংসদ কাজী শহিদ

সাংসদ কাজী শহিদ পাপুল। ফাইল ছবি
সাংসদ কাজী শহিদ পাপুল। ফাইল ছবি

ভিসা–বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে কর্মী নেওয়ার জন্য দেশটির সরকারের একজন আমলাসহ তিনজনকে ২১ লাখ দিনার (১ দিনারে ২৭৪ টাকা হিসেবে ৫৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা) ঘুষ দিয়েছিলেন আটক সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। তাঁদের মধ্যে একজন সাংসদের দপ্তরে গিয়েছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে কাজী শহিদ ঘুষ গ্রহণকারীদের নাম জানিয়েছেন।

কুয়েতের ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমস গতকাল সোমবার তদন্ত কর্মকর্তাদের সূত্রে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

কাজী শহিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁদের একজন কুয়েতের একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত, অন্যজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আমলা আর শেষজন দেশটির এক নাগরিক।

কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন, বাংলাদেশের আটক সাংসদকে মদদ দিয়েছেন দেশটির অন্তত সাতজন বিশিষ্ট নাগরিক। ওই সাতজনের মধ্যে কুয়েতের সাবেক ও বর্তমান তিন সাংসদও রয়েছেন। লক্ষীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে মদদদানকারীদের পরিচয় প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন কুয়েতের সাংসদেরা।

কুয়েতের দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ নাজাহা জানিয়েছে, মানব পাচার নিয়ে বাংলাদেশের সাংসদের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউশন যে তদন্ত চালাচ্ছে, তা নিয়ে সংস্থাটি পরের ধাপের তদন্ত চালাবে।

সূত্রের বরাত দিয়ে আরব টাইমসের গতকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশের সাংসদ জানিয়েছেন, কুয়েতের এক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তা তাঁর মালিকানাধীন ক্লিনিং কোম্পানিতে গিয়ে দেখা করেছিলেন। তাঁদের বৈঠকের আগে কুয়েত সরকারের জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা বাংলাদেশের সাংসদকে স্থানীয় কর্মীদের ছুটিতে পাঠাতে বলেছিলেন। কারণ, ওই কর্মকর্তা চাননি কুয়েতের স্থানীয় লোকজন তাঁকে চিনে ফেলুক। তাই কুয়েতি কর্মকর্তার অনুরোধে বৈঠকের আগেই বাংলাদেশের সাংসদ তাঁর স্থানীয় কর্মীদের ছুটি দিয়ে দেন। মূলত, কুয়েতের ওই কর্মকর্তা বাংলাদেশের সাংসদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার সময় কাউকে সাক্ষী রাখতে চাননি।

কাজী শহিদ কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে ১০ লাখ দিনার বা ২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার চেক এবং এক লাখ দিনার বা ২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা নগদ দেওয়ার কথা তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে জানিয়েছেন। চেকের একটি কপি পাবলিক প্রসিকিউশনকে দেওয়া হয়েছে।

বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিকে কুয়েত আনার ব্যবস্থা করে দেওয়ার শর্তে স্থানীয় এক নাগরিককে ২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ১০ লাখ কুয়েতি দিনার ঘুষ দেন আটক সাংসদ। এ তথ্যটিও তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।

পার্লামেন্টে আলোচনা, জড়িত কুয়েতের সাবেক ও বর্তমান তিন সাংসদ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্যবিষয়ক সতর্কতা থাকার পরও কুয়েতের পার্লামেন্টের অধিবেশন চলছে। স্পিকার মারজুক আল ঘানেম গতকাল আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন, দুই মন্ত্রীর নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব আর করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য অধিবেশন চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

কুয়েত টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, কুয়েতের পার্লামেন্টের চলমান অধিবেশনে মানব পাচারের মামলার প্রসঙ্গটি সাংসদেরা আলোচনায় তুলেছেন। বেশ কয়েকজন সাংসদ গত রোববারের আলোচনায় বলেছেন, ভিসা–বাণিজ্যের নামে বাংলাদেশের সাংসদের সঙ্গে মানব পাচার চক্রের মদদদাতা কুয়েতের সাংসদ ও সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করা হোক।

সাংসদ আবদুলওয়াহাব আল বাবতেইন ওই কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

সাংসদ রিয়াদ আল আদসানি বলেন, এ ধরনের কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সব সংস্থার কাজে স্বচ্ছতা থাকাটা জরুরি। এ ধরনের অপরাধের তদন্তের যেসব প্রমাণ পাওয়া যাবে, এর সবই পাবলিক প্রসিকিউশনকে দেওয়া উচিত।

আরবি দৈনিক আল রাইয়ের গতকালের এক খবরে বলা হয়েছে, মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক বাংলাদেশের সাংসদকে কুয়েতের সাবেক ও বর্তমান তিন সাংসদ মদদ দিয়েছেন।

আটক সাংসদ কুয়েতের পার্লামেন্টের বর্তমান দুই সাংসদ ও সাবেক এক সাংসদের সঙ্গে লেনদেনের কথা দেশটির গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন। কুয়েতে ব্যবসা করার জন্য দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বিপুল অঙ্কের ঘুষ দেওয়ার বিষয়টিও তিনি গোয়েন্দাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।

পরের ধাপের তদন্ত করবে নাজাহা
কুয়েতে মানব পাচার নিয়ে বাংলাদেশের সংসদের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউশন যে তদন্ত চালাচ্ছে, তা নিয়ে পরের ধাপের তদন্ত চালাবে দেশটির দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ নাজাহা। নাজাহার মুখপাত্র এবং সংস্থাটির দুর্নীতি নিরূপণ ও তদন্তবিষয়ক সহকারী মহাসচিব এক বিবৃতিতে বলেন, তদন্তে অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আর্থিক লেনদেনের যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত লেনদেনের যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তার সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় সংরক্ষিত তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।