দক্ষতা বাড়ায় প্রবাসী আয় বেড়েছে: আইওএম

উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীরা স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের তুলনায় বেশি অর্থ দেশে পাঠায়। দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে দেশে ১০ বছরের মাথায় গড়ে প্রতি মাসে একজন প্রবাসীর থেকে আয় বা রেমিটেন্স বেড়েছে ২৫৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত। দক্ষ কর্মীরা ভালো বেতনের চাকরিতে নিয়োগ পান এবং দীর্ঘ সময় ধরে স্বল্প দক্ষ কর্মীদের তুলনায় বেশি রেমিটেন্স পাঠান।

এমন তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘের আর্ন্তজাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা- আইওএম পরিচালিত এক জরিপে। আজ মঙ্গলবার 'বাংলাদেশে অভিবাসন, ফ্যামিলি রেমিটেন্স, সম্পদ এবং দক্ষতার শ্রেণীবিভাগ' বিষয়ক একটি প্রতিবেদনে জরিপের তথ্য প্রকাশ করেছে আইওএম। ২০০৯ এর সঙ্গে ২০১৯ এ পাওয়া তথ্যের তুলনা করেছে।

দেশের এক হাজার রেমিটেন্স-নির্ভর পরিবারের উপর পরিচালিত জরিপ ও মূল অংশীদারদের সঙ্গে গুনগত আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে আইওএম। আন্তর্জাতিক ফ্যামিলি রেমিটেন্স দিবসে উপলক্ষ্যে আজ এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আইওএম।

জরিপ বলছে, অভিবাসীদের দক্ষতার উপর নির্ভর করে রেমিট্যান্স কিভাবে বিনিয়োগ এবং সঞ্চয় করা হবে। দক্ষ অভিবাসীরা পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ করে সঞ্চয় হিসাবে রেমিট্যান্স বিনিয়োগ করতে।আর অদক্ষ অভিবাসীরা তাদের রেমিট্যান্স মূলত ঋণ পরিশোধে খরচ করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মী এবং রেমিটেন্স প্রেরকদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ পুরুষ। এদের প্রায় ১২ শতাংশ অভিবাসী কর্মী একেবারেই স্কুলে যায়নি এবং প্রায় ৮০ শতাংশ পড়াশোনা করেছেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত।জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে, অর্ধেক অংশ কাজ করেছেন কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির কর্মচারী হিসেবে (৪৯ শতাংশ) এবং প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৬ শতাংশ) কাজ করেছে শ্রমিক হিসেবে যার মধ্যে দিন মজুরি, খন্ডকালীন শ্রমিক আছেন।

বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীরা অন্য দেশের দক্ষ কর্মীদের তুলনা কম অর্থ পাঠাতে পারেন বা অর্থনৈতিকভাবে কম লাভবান হন। কারণ অদক্ষ এবং স্বল্প দক্ষ কর্মীরা যে পরিমাণ অর্থ পাঠান তা দক্ষ কর্মীদের তুলনায় অনেক কম।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে রেমিটেন্স গ্রহণকারী পরিবারের সংখ্যা সর্বোচ্চ (৭৬ শতাংশ)। রেমিটেন্স গ্রহণকারী পরিবারের মোট ৬৫ শতাংশ পরিচালনা করেন নারী, যারা মূলত বেকার এবং সাধারণত রেমিটেন্সকে অ-আয় উৎপাদনমূলক কর্মকান্ডে খরচ করেন। জরিপ মতে, রেমিটেন্স মূলত স্বল্পমেয়াদী প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহৃত হয় এবং সম্পদের বৈচিত্র্য আনতে বা আর্থিক স্থিতিশীলতা তৈরি করতে খুব কমই ব্যবহৃত হয়, যা রেমিটেন্সের উপর পরিবারের নির্ভরতা আরও বাড়িয়ে তোলে। প্রবাসী এবং তাদের পরিবারের স্বল্প অর্থনৈতিক জ্ঞান তাদেরকে টেকসই উপার্জন, রেমিটেন্স ব্যবস্থাপনা এবং সম্পদ তৈরীর ক্ষেত্রে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেয়।

জরিপে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, জেন্ডার-সংবেদনশীল দক্ষতা বিকাশের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে এবং পরিবারের অর্থনৈতিক জ্ঞান এবং রেমিটেন্স পরিচালনার ক্ষমতা তৈরি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করতে হবে যাতে করে স্বল্প দক্ষ অভিবাসী কর্মী আরো বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারে এবং ঋণের চক্র ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে পারে। তৃতীয়ত, বিপদাপন্নতা হ্রাসে এবং আর্থিক স্বাধীনতার পথে সহায়তা প্রদানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যেন উন্নত ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং সঞ্চয়ের আনুষ্ঠানিককরণ নিশ্চিত হয়। চতুর্থত, নারীদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক নীতি গ্রহণ করতে হবে যাতে করে অর্থনীতির পরিমাপ এবং টেকসই কৌশলসমূহ বিবেচনা করে সম্পদ উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সর্বশেষে, অভিবাসী এবং রেমিটেন্স প্রাপকদের জেন্ডার-সংবেদনশীল অর্থনৈতিক শিক্ষা এবং পরামর্শ দেওয়ার জন্য পার্টনারশিপ গঠনের সুপারিশ করা হয় এই গবেষণায়।

এ বিষয়ে আইওএম বাংলাদেশ মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন মন্দা-প্রভাবিত রেমিটেন্স নির্ভর মানুষকে সহায়তায় অধিক নজর দিতে হবে।দক্ষতা বিকাশকে অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য সরকারকে সহায়তা করা প্রয়োজন।একই সঙ্গে উৎপাদনমূখী খাতে রেমিটেন্স বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে প্রবাসী পরিবারকে অথনৈতিক শিক্ষা দিতে হবে।

আইওএম বলছে, কোভিড-১৯ মহামারি সৃষ্ট অর্থনৈতিক ও শ্রম সংকটের ফলে হাজার হাজার অভিবাসী কর্মী বছর শেষে দেশে ফিরে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মন্দা সংক্রান্ত কারণে চাকরি ছাটাই-এর ফলে শুধুমাত্র রেমিটেন্স গ্রহণকারী পরিবারগুলোই নয়, প্রভাবিত হবে তাদের কমিউনিটিও। বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃরেকত্রীকরণে সহায়তা দেওয়া এবং তাদের নামে দেওয়া অপবাদ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহবান জানিয়েছে আইওএম।