রোগীর স্বজনদের মারধরে চিকিৎসকের মৃত্যুর অভিযোগ

মো. আব্দুর রকিব খান
মো. আব্দুর রকিব খান

খুলনা নগরের গল্লামারী এলাকার রাইসা ক্লিনিকের মালিক চিকিৎসক মো. আব্দুর রকিব খান (৫৯) মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মারা গেছেন। পরিবারের অভিযোগ গতকাল সোমবার রাতে এক রোগীর স্বজনেরা তাঁকে মারধর করে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

রকিব খান বাগেরহাট সরকারি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের অধ্যক্ষ। রাইসা ক্লিনিকের ওপরের তলায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন।

আবদুর রকিবের ছোট ভাই মো. সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ১৪ জুন সকালে গল্লামারীর মুহাম্মদ নগর এলাকার এক অন্তঃস্বত্তা নারীকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করেন স্বজনেরা। ওই নারীর কিছু জটিলতা থাকায় ওইদিন বিকেলে তাঁর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হয়। মা ও নবজাতক দুজনই ভালো ছিলেন কিন্তু রাতে মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। ১৫ জুন সকালে ওই রোগীকে খুলনা মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। রোগীকে স্বজনেরা খুলনা মেডিকেলে নিলে সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। দুপুরের দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়ার পথে ওই নারী মারা যান। এরপর রাত ৯টার দিকে ওই নারীর স্বজনেরা লাশ নিয়ে ক্লিনিকের সামনে এসে রকিব খানকে মারধর করেন। এসময় ভারী কিছু দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়।

মারধরের পর কয়েকবার বমি করেন রকিব খান। অবস্থা গুরুতর হতে থাকলে রাত ২টার দিকে তাঁকে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে আজ দুপুরে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়া হয়। সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় মামলা করা হবে।

গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক গাজী মিজানুর রহমান বলেন, সকালের দিকে সিটিস্ক্যান করে দেখা যায় রকিব খানের মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেখান থেকে তাঁকে ঢাকায় পাঠানোর কথা বলা হয়।

খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক বিধান চন্দ্র গোস্বামী বলেন, রকিব খানকে দুপুরের দিকে হাসপাতালের আইসিইউ'তে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যার দিকে তিনি মারা যান। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম বাহার বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন খুলনার সভাপতি গাজী মিজানুর রহমান বলেন, রকিব খান একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক। যেখানে করোনাকালীন সবাই প্রাইভেট ক্লিনিক বন্ধ রেখেছেন সেখানে তিনি ঝুঁকি নিয়ে তা চালু রেখে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন এর চেয়ে মহৎ কাজ আর কী হতে পারে! কিন্তু তাঁকেই রোগীর স্বজনদের হাতে মার খেয়ে মারা যেতে হলো এর চেয়ে দুঃখজনক আর কোনো ঘটনা হতে পারে না।