অপেক্ষা সুস্থ সেই পৃথিবীর জন্য

>করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

এপাশ–ওপাশ করেও যখন ঘুমাতে পারলাম না, ধরে নিলাম আজ আর ঘুম হবে না। পুরোনো শব্দগুলো আবার কানে আসবে এখনই।

এই তো তিন কি সাড়ে তিন মাস আগেও হলে ছিলাম—রুমমেটরা মিলে রাতে মুভি দেখা, মুড়ি মাখানো, পিৎজা অর্ডার আর ডেলিভারিম্যানের অপেক্ষায় হুলুস্থুল করতাম। সকাল সকাল শেয়ার করে রিকশায় যাওয়া, সিআর কে মেসেজ করে রাখা, ‘আসতেছি রোলগুলার প্রেজেন্ট দিয়ে দিও।’ ক্লাস ব্রেকে বান্ধবীর সঙ্গে কত গল্প হতো। সবাই মিলে আবার হুটহাট ৩০০ ফিট গিয়ে নীলাবাজারের মিষ্টিও খাওয়া হতো। বান্ধবীর সঙ্গে কত বাইরে ঘুরতে যেতাম, ভার্সিটি শেষে প্লিজ আজকে ফুচকা খাব জিদ করতাম। হলের পাশের টঙে প্রায়ই চা খেতে হতো।

বুঝতেই পারলাম না কোথা থেকে কী হয়ে গেল। তিনটা মাস বাসায়। করোনা নামক মহামারি দিয়ে আত্মরক্ষার জন্য সবাই গৃহবন্দী।

একটা নিউজ ওই সময়টাতে শুনতাম ‘চীনের উহানে নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানুষজন মারা যাচ্ছে’। এরপর অন্য দেশগুলোর কথাও শুনলাম। তখনো আমরা ক্লাসে-মিড টার্ম দিচ্ছি। ভাবতাম বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়বে নাকি ভাইরাসটি, সব বিমানব্যবস্থা তো খোলা এখনো; এদেশ–ওদেশ থেকে মানুষজনের আসা–যাওয়া চলছে। একদিন বিকেলে ঘুমাচ্ছিলাম, উঠে রুমমেটের কাছে শুনলাম বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত। দুই দিনের মধ্যেই মাস্কের দাম ডাবল, স্যানিটাইজার তার দুই দিন আগেও ফার্মেসিতে ভরপুর দেখেছিলাম, আজ ফাঁকা। ভার্সিটি একদম হঠাৎ করে বন্ধ হলো, কয়েক দিনের মধ্যেই সবকিছু লকডাউন।

যে যার মতো হল থেকে দেশের বাড়িতে চলে গেছে আম্মা–আব্বার কাছে। কিছু হয়তো আমার মতো লকডাউনটা কত দিন ঠিক বুঝতে না পেরে ঢাকায়ই রয়ে গেল।

এই তিন মাসে আপুর সঙ্গে অনেক নতুন জিনিস শিখছি; বই পড়ছি, রান্না করছি, অনলাইনে ক্লাস করছি। কিন্তু হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে খুব হতাশ হয়ে পড়ি, রাতে জেগে থাকি, উল্টাপাল্টা ভাবি আবার মনকে ডাইভার্ট করি বিভিন্নভাবে। করোনাকালীন এই সময়টাতে অনেকেই হয়তো নানাভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে বা বিভিন্ন মানসিক বা শারীরিক চাপে থাকছে। আমি মনে করি, এই সময়টাতে পরিবারের সবাইকে সবার প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত, আলাদা সময় করে সবাই মিলে পুরোনো গল্প করা উচিত। আগের মতো বাইরে গিয়ে হয়তো বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতে পারছি না, সোশ্যাল মিডিয়া বা ফোনে যোগাযোগ রাখছি। চেষ্টা করি যতটুকু ভালো থাকা যায়, যতটুকু শেখা যায়।

অপেক্ষা করছি সব ঠিক হয়ে যাওয়ার—প্রিয় মুখগুলোকে দেখার। একসঙ্গে বসে আবার টঙ দোকানে চা খাওয়া হবে কি না, জানি না, দূরত্ব কতটুকু রেখে কথা বলতে হবে, তখন জানি না। শুধু অপেক্ষা করছি, সুস্থ সেই পৃথিবীর জন্য।

*শিক্ষার্থী, ৩য় বর্ষ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস। [email protected]