৩৩ হাজার টাকা লুট করতে ব্যবসায়ীকে হত্যা করে স্বামী-স্ত্রী

বস্তায় ভরে লাশের তিনটি টুকরা বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখে চার্লস রূপম। ছবি: সংগৃহীত
বস্তায় ভরে লাশের তিনটি টুকরা বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখে চার্লস রূপম। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণখানের মোল্লারটেকের নিজ বাসায় ডেকে ব্যবসায়ী হেলালউদ্দিনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তাঁর কাছ থেকে ৩৩ হাজার টাকা লুট করেন চার্লস রূপম ও তাঁর স্ত্রী শাহিনী আক্তার। পরে লাশ তিন টুকরা করে তা বস্তায় ভরে উত্তরার বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখেন তাঁরা।

হেলাল হত্যায় গ্রেপ্তার হওয়া চার্লস রূপমের স্ত্রী শাহিনা আক্তার ওরফে মনি সরকার (১৮) ও তাঁর শাশুড়ি রাশিদা আক্তার (৪৮) আজ শুক্রবার পুুলিশের কাছে ও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে উত্তরার প্রেমবাগান ও আবদুল্লাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে লুট করা ৩৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

গত সোমবার পুলিশ দক্ষিণখানের হাজী মুক্তিযোদ্ধা রোডের কাঁচারাস্তার পাশ থেকে পুলিশ এক ব্যক্তির নাভি থেকে নিচ পর্যন্ত এক টুকরা, নাভি থেকে গলা পর্যন্ত আরেক টুকরা উদ্ধার করে। এই দুই টুকরাই বস্তায় ভরা ছিল। পরদিন গত মঙ্গলবার বিমানবন্দর থানার ঈরশাল কলোনি বটতলা পানির পাম্পের সামনের ডাস্টবিনের ভেতর থেকে খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করে। লাশের তিন টুকরা মেলানোর পর লাশটি ব্যবসায়ী হেলালউদ্দিনের বলে তাঁর বড় ভাই মো. হোজায়ফা শনাক্ত করেন। ওই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে দক্ষিণখান থানায় হত্যা মামলা করা হয়। থানা-পুলিশের পাশপাশি ডিবির উত্তর বিভাগ মামলার তদন্ত শুরু করে।

ডিবি পুলিশ জানায়, হেলালউদ্দিন দক্ষিণখান থানার জয়নাল মার্কেটের পাশে আরেকজনের সঙ্গে যৌথভাবে একটি কক্ষে ভাড়া থাকতেন। একই এলাকার মধ্য আজমপুরে ফ্ল্যাক্সিলোড ও বিকাশের এজেন্ট হিসেবে তিনি ব্যবসা করতেন। হেলাল অবিবাহিত ছিলেন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে গত রোববার রাতে বাসায় ফিরে না আসায় তাঁর রুমমেট আল আমিন ঘটনাটি হেলালের এক স্বজনকে মুঠোফোনে জানান।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির উপকমিশনার (উত্তর) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হেলালউদ্দিনের পূর্বপরিচিত চার্লস রূপম। রূপমের বাসা থেকে যেসব স্থানে লাশের টুকরা ফেলে দেওয়া হয়েছে, সেসব স্থানের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসি) ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ও হেলালের মুঠোফোনের কল তালিকার সূত্র ধরে ডিবি চার্লসের স্ত্রী শাহিনা ও তাঁর মাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তাঁরা হেলালউদ্দিনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

ডিবির ওই কর্মকর্তা জানান, পুলিশের কাছে ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে শাহীনা ও তাঁর মা জানান, হেলালের ব্যবসা ভালো চলছিল। রূপম হেলালকে খুন করে তাঁর কাছ থেকে টাকা লুট করার ফন্দি আঁটেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী রোববার দুপুরে চার্লস রূপম একটি ফটোকপিয়ার মেশিন ৩৩ হাজার টাকায় হেলারের কাছে বিক্রি করবেন বলে তাঁকে তাঁর মোল্লারটেকের বাসায় ডেকে আনেন।

একপর্যায়ে সেখানে ঘুমের বড়িমিশ্রিত চা খাওয়ালে হেলাল অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর চার্লস রূপম ও তাঁর স্ত্রী ডিশ-সংযোগের তার গলায় পেঁচিয়ে হেলালকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে লাশ বাথরুমে নিয়ে তিন টুকরা করেন। রাতে লাশের টুকরাগুলো বস্তায় ভরে তা গুম করতে পৃথক স্থানে ফেলে রাখেন। পরে রূপম তাঁর শাশুড়ি রাশিদা আক্তারের পরামর্শে পালিয়ে যান। এখন হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী রূপমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।