কামাল লোহানীর মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জে শোকের ছায়া

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী। প্রথম আলো ফাইল ছবি
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী। প্রথম আলো ফাইল ছবি

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানীর মৃত্যুতে তাঁর জন্মভূমি সিরাজগঞ্জে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আজ শনিবার সকালে তাঁর মৃত্যুর পরপরই খবর ছড়িয়ে পড়ে পুরো জেলায়। দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধার মৃত্যুকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করে জেলার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, তিনি সবার মাথার ওপর ছায়ার মতো ছিলেন। হঠাৎ করে তাঁর চলে যাওয়া মেনে নেওয়ার মতো নয়।


১৯৩৪ সালের ২৬ জুন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার খান সনতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কামাল লোহানী। তাঁর পুরো নাম আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতিচর্চায় নিবেদিত হন তিনি। ৮৬ বছর বয়সে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে আজ শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ঢাকার বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আজ বিকেলে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নিজ গ্রামের বাড়িতে তাঁকে দাফনের প্রস্তুতি চলছে।

সিরাজগঞ্জ শহরের এসএস রোডে বসবাস করেন কামাল লোহানীর ছোট বোন আফরোজা খাতুন। আজ দুপুরে সেখানে গেলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আফরোজা বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর গত মার্চ মাসে শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই সিরাজগঞ্জে এসেছিলেন তিনি। এরপর ভাইজানের সাথে আমার আর দেখা হলো না। তিনি ছিলেন আমাদের বটবৃক্ষ। ঢাকায় থাকলেও সব সময় তিনি আমাদের ছায়ার মত আগলে রেখেছেন। এমন সময় আমার ভাইজানের মৃত্যু হলো যে সময় স্বাভাবিকভাবে তাঁকে দেখার সুযোগ হলো না।’

জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি জান্নাত আরা হেনরী বলেন, ‘এই তো মার্চ মাসের ৬, ৭, ৮ তারিখে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে তিন দিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন তিনি। তাঁর উপস্থিতিতে সম্মেলন আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল। আজ হঠাৎ বৈশ্বিক মহামারি তাঁর প্রাণ কেড়ে নেবে, এমনটি আমরা ভাবতে পারছি না। এটি আসলে আমাদের জন্য চরম বেদনার।’

নজরুল একাডেমি সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী বলেন, ‘সিরাজগঞ্জের সূর্যসন্তান কামাল লোহানী শুধু আমাদের গর্ব নয়, পুরো জাতির গর্ব। তাঁর মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে চরম শূন্যতা সৃষ্টি করল। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি হেলাল আহম্মেদ বলেন, জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও উপদেষ্টা ছিলেন কামাল লোহানী। তাঁর মৃত্যু আমাদের পথ প্রদর্শক শূন্য করেছে। দেশের জন্য এমন মহামানবের জন্ম বারবার হয় না।’

সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস রবিন বলেন, ‘সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী ছিল আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর মৃত্যুর খবরে সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।’ সাংবাদিক, নাট্যকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘এ দেশের ঐতিহাসিক নানা ঘটনার সঙ্গে ছিল তাঁর যুক্ততা। অসময়ে তাঁর মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা পূরণ হওয়ার নয়।’

আরও পড়ুন: