খুলনায় চিকিৎসক রকিব হত্যা মামলার আরেক আসামি গ্রেপ্তার

চিকিৎসক আবদুর রকিব খান
চিকিৎসক আবদুর রকিব খান

খুলনায় চিকিৎসক আবদুর রকিব খান হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি আব্দুল কুদ্দুসকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার দুপুরের দিকে রূপসা উপজেলার পালেরহাট এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে ওই মামলার এজাহারভুক্ত চার আসামির সবাই গ্রেপ্তার হলেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে মামলার প্রধান আসামি জমির শেখ ও ৩ নম্বর আসামি আব্দুল আলী এবং এজাহারবহির্ভূত আসামি গোলাম মোস্তফাকে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি আব্দুর রহিমকে মঙ্গলবার রাতে ও এজাহারবহির্ভূত আসামি খাদেজা বেগমকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।


মামলার প্রধান আসামি জমির শেখ গতকাল শুক্রবার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে খাদেজা বেগমও আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আব্দুল আলী, গোলাম মোস্তফা ও আব্দুর রহিমের দুই দিনের রিমান্ড চলছে।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম বাহার বলেন, চিকিৎসক রকিব খান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত চার আসামির সবাইকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামিদের মধ্যেও হামলাকারী পরিবারের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

১৪ জুন খুলনা নগরের গল্লামারী এলাকায় অবস্থিত রাইসা ক্লিনিকে শিউলি বেগম নামের এক নারীর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হয়। প্রথম দিকে সন্তান ও মায়ের শরীর ভালো থাকলেও রাতে শিউলি বেগমের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। সকালে ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী শিউলি বেগমকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন স্বজনেরা। পথিমধ্যে মারা যান শিউলি বেগম।

এ ঘটনায় ১৫ জুন রাতে শিউলি বেগমের স্বজনেরা রাইসা ক্লিনিকের মালিক চিকিৎসক আবদুর রকিব খানকে মারধর করেন। পরে মস্তিস্কে রক্তক্ষরনের কারণে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রকিব খান। ওই ঘটনায় রকিব খানের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম খান বাদী হয়ে খুলনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এদিকে রোগীর স্বজনদের হামলায় রকিব খান মারা যাওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন খুলনার চিকিৎসকেরা। তবে প্রথম দিনেই এজাহারভুক্ত চার আসামির মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হওয়ায় বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে তা ৭২ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করা হয়। ওই সময়ের মধ্যে এজাহারভুক্ত অন্য আসামিকে গ্রেপ্তার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার ও চিকিৎসকের মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে না নেওয়া হলে আবারও কর্মবিরতি পালন করার হুমকি দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা জেলা শাখার সভাপতি শেখ বাহারুল আলম বলেন, তিনটি দাবির একটি পূরণ হয়েছে। দ্রুত বিচার আইনে মামলাটি পরিবর্তিত করাও কিছুটা সময়সাপেক্ষ। তবে ওসির প্রত্যাহারের ব্যাপারটি একান্তই খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনারের হাতে। ওসি রকিব খানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যে ধরনের আচারণ করেছেন, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ কারণে ওসির প্রত্যাহারের দাবি করা হয়েছিল। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই দাবি পূরণ করা না হলে চিকিৎসকেরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।