স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দে করোনা ব্যবস্থাপনা গুরুত্ব পায়নি: গবেষণা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই বিনিয়োগের বিষয়টি যথাযথভাবে গুরুত্ব পায়নি। এ মহামারিতেও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত অবহেলিতই থেকেছে।

আজ শনিবার বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে সম্পদ সংস্থানের বিভিন্ন দিক’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। হেলথ ওয়াচের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ।

১৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে গবেষণার তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সংস্থাটি দপ্তরে বসে নথিপত্র পর্যালোচনা, বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর করোনা–সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ও সম্পদের বিবরণী সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে এই তথ্য সংগ্রহ করেছে।

গবেষণায় বলা হয়, স্বাস্থ্য খাতের বর্তমান বরাদ্দের মাধ্যমে শুধু স্বল্পমেয়াদি ও তাৎক্ষণিক প্রয়োজনগুলো মেটানো সম্ভব হবে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই বিনিয়োগের বিষয়টি যথাযথভাবে গুরুত্ব পায়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে কোভিড-১৯–সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে স্টাফদের চাহিদা নিরূপণ, মেডিকেল সরঞ্জামের সরবরাহ এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের প্রশিক্ষণের চাহিদা জানার দরকার রয়েছে। এ ছাড়া রোগতত্ত্ব , রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সামর্থ্য বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ করা গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ জানায়, এ দেশে বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাত কম অগ্রাধিকার পায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ এখনো জিডিপির ১ শতাংশের কম। করোনা মহামারির মতো সংকট সত্ত্বেও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত জাতীয় অগ্রাধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে অবহেলিত থেকে গেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মোকাবিলার লক্ষ্যে মোট ১৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ প্যাকেজগুলোর জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের প্যাকেজের বরাদ্দ জিডিপির শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এই বরাদ্দ স্বাস্থ্য খাতের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

জরুরি অবস্থা চলাকালে কার্যক্রম বাস্তবায়নে দুর্নীতি মোকাবিলায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির উন্নত ব্যবস্থা থাকা দরকার বলে উল্লেখ করা হয় গবেষণায়। এ ছাড়া জরুরি অবস্থার অবসানে প্রকল্প শেষ করার উপযুক্ত পরিকল্পনা ছাড়াই এর মধ্যে একাধিক প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে ৫ হাজার শয্যার হাসপাতাল এবং অব্যবহৃত বড় আকারের খালি ভবন কিংবা ভবনের খালি জায়গাগুলো হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে। মহামারি শেষে এই ধরনের অস্থায়ী হাসপাতালগুলোর তহবিল, সরঞ্জাম এবং উপকরণগুলো দিয়ে কী করা হবে, সে সম্পর্কে একটি স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার বলে জানানো হয়।

মহামারির শুরু থেকে আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় ব্যাপকভাবে হয়নি বলে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, করোনা পরীক্ষার জন্য শুরুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পর্যাপ্ত ল্যাব টেকনিশিয়ান ছিলেন না। উপযুক্ত আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের অভাবে ল্যাব টেকনিশিয়ানের ঘাটতি পূরণে বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের স্বাস্থ্য প্রকল্প ‘আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার’ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ল্যাব টেকনিশিয়ানদের করোনা পরীক্ষার কাজে যুক্ত করা হয়েছিল। সংস্থাটি আরও জানায়, সরকার এবং দাতা সংস্থাগুলোর জোট কাজ করার চেষ্টা করছে।

গবেষণায় বলা হয়, রোগপ্রতিরোধের ব্যবস্থা—পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, হাত ধোয়া, ওষুধ, মাস্ক, গ্লাভস ইত্যাদির জন্য সীমিত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের প্রয়োজনগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত জনগণকে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করতে, সামাজিক কর্মকাণ্ডে শারীরিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থাগুলো মেনে চলতে কমিউনিটি/ এলাকাবাসীকে সম্পৃক্ত করার দরকার রয়েছে। বর্তমান সংকটে যক্ষ্মার চিকিৎসা, টিকাদান, পরিবার পরিকল্পনার সেবাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী বাজেটে এই বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ জানায়, এই জাতীয় মহামারি দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে শুরু করে সেবাদান পর্যন্ত সবকিছু বিকেন্দ্রীকরণ করা এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা দরকার।