জুনে বরিশালে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক বেড়েছে

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

চলতি মাসে বরিশাল বিভাগে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপক হারে বাড়ছে। বিভাগে সংক্রমণ শুরুর পর জুনের শেষ ১৭ দিনেই অর্ধেকের বেশি (১ হাজার ২৫২ জন) আক্রান্ত হয়েছেন। আর বিভাগে কোভিডে আক্রান্ত ৩৫ জনের মধ্যে ২৫ জনই মারা গেছেন শেষ ১৮ দিনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বরিশাল বিভাগে করোনা সংক্রমণের উল্লম্ফন (গতি) মাঝারি পর্যায়ে ছিল। তবে এটা জুনে হঠাৎ করে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। সংক্রমণের এই গতি থামাতে প্রস্তাবিত জোনভিত্তিক লাল, হলুদ, সবুজ এলাকা চিহ্নিত করে যদি দ্রুত লকডাউন পদ্ধতি কার্যকর করা যায়, তাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এটা যত দ্রুত করা যাবে, তত সুফল পাওয়া যাবে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে এই বিভাগে করোনায় সংক্রমিত হলেন ১ হাজার ৭৯৪ জন। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরিশাল জেলায়, ১ হাজার ৯০ জন। আর তাঁদের সিংহভাগই বরিশাল নগর এলাকার বাসিন্দা, যার সংখ্যা ৮৪৬। এ ছাড়া পটুয়াখালীতে সংক্রমিত ২২২ জন, ভোলায় ১৭৬, বরগুনায় ১৪৫, পিরোজপুরে ১৩৩ ও ঝালকাঠিতে ১১২ জন।
বিভাগে এখন পর্যন্ত কোভিড–১৯–এ মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। এর মধ্যে মে পর্যন্ত এটা ১০ জনে সীমাবদ্ধ ছিল। বাকি ২৫ জনের মৃত্যু হয় গত ১৭ দিনে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বরিশালে ১৪ জন। এরপর পটুয়াখালীতে ১০ জন, ঝালকাঠিতে ৪, পিরোজপুরে ৩ এবং বরগুনা ও ভোলা জেলায় ২ জন করে।
সংক্রমণের উল্লম্ফন
সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ৯ এপ্রিল বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার ৩২ ও ৭০ বছর বয়সী দুই ব্যক্তি করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর তাঁদের দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাঁরা করোনা পজিটিভ হওয়ার মধ্য দিয়ে বিভাগের প্রথম দুজন করোনা রোগী শনাক্ত হন। ৩১ এপ্রিল পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৭। এরপর মে মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে তা কিছুটা বাড়ে। এই ১৪ দিনে আক্রান্ত ৯৯ জন। কিন্তু মাসের শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ৬১৭ জন।
জুনের শুরু থেকে সংক্রমণের হিসাবটা দ্রুত পাল্টে যায়। গত ১৭ দিনে তা এক লাফে ১ হাজার ১৬৮ জন বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৯৪ জনে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল সার্বিক বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সংক্রমণের গতি থামানোর জন্য এলাকাভিত্তিক লকডাউনের বিষয়টি পরীক্ষমূলকভাবে কয়েকটি এলাকায় বাস্তবায়ন করে সুফল মিলেছে। বরিশালেও এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। আপাতত বরিশাল নগরে দুটি ওয়ার্ড পরীক্ষামূলকভাবে লকডাউনের জন্য সুপারিশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
মৃদু ও মাঝারি লক্ষণ বেশি
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বরিশাল বিভাগে আক্রান্ত ১ হাজার ৭৯৪ জনের মধ্যে খুব কমসংখ্যক রোগী হাসপাতালের শরনাপন্ন হয়েছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই সংখ্যা মাত্র ৪৭১। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ছিলেন ১৮০ জন। এ ছাড়া ২৮১ জনকে শনাক্তের পর চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে হোম আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, যাঁদের করোনা শনাক্ত হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে কিছু রোগীর কোনো লক্ষণ থাকে না, কিছু রোগীর মৃদু লক্ষণ থাকে। এ ধরনের রোগীকে লক্ষণ অনুযায়ী মৃদু, মাঝারি, তীব্র, মারাত্মক তীব্র—চার থেকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। বরিশালে মৃদু ও মাঝারি, অর্থাৎ নিউমোনিয়ার আগ পর্যন্ত রোগীর সংখ্যাটা একটু বেশি। এ ক্ষেত্রে অনেক রোগীর কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, শুধু শারীরিক পরিচর্যার প্রয়োজন। আবার কিছুসংখ্যকের সামান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এসব রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাঁদের বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সংখ্যাটা বেশি। কেবল তীব্র অসুস্থ, বিশেষ করে যাঁদের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, এমন রোগীদের কেবল হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়। সে সংখ্যাটা পাঁচ ভাগেরও কম।