১০ খালে 'কিছুই করেনি' ওয়াসা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঢাকা শহরের বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হওয়ার অন্যতম পথ খাল। এগুলোর বেশির ভাগই দেখভাল করে ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু বিদায়ী অর্থবছরে সংস্থাটির অধীন ২৬টি খালের মধ্যে অন্তত ১০টিতে কার্যত পুনঃখনন ও পরিষ্কারের কাজ করা হয়নি। ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এ কথা বলেছেন। এমন পরিস্থিতিতে এ বছরও নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান ৮ জুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী (প্রায় ৪৯ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন ও পরিষ্কার, ৩০০ কিলোমিটার নালা পরিষ্কার) সব কাজই করেছি। কিছু খাল পুনঃখনন করে পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। তাই গত বছরের তুলনায় এবার জলাবদ্ধতা কম হবে।’

২৬ খালের মধ্যে ১০টিতে কার্যত কোনো কাজ হয়নি—সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া এমন তথ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ওয়াসার এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। তাঁর দাবি, সব খালেই কম-বেশি কাজ হয়েছে। গত বছর যেসব খাল পুনঃখনন করা হয়েছিল, সেসব খালের ওপর থেকে হয়তো শুধু ময়লা-আবর্জনা তোলা হয়েছে।

ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। মাঠপর্যায়ে এ দায়িত্ব পালন করে সংস্থাটির ড্রেনেজ (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) সার্কেল। খাল ও নালা রক্ষণাবেক্ষণই এই সার্কেলের মূল কাজ।

ঢাকা শহরের বৃষ্টির পানি মূলত ওয়াসার প্রায় ৩৮৫ কিলোমিটার পানিনিষ্কাশনের বড় নালা, ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট ও প্রায় ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ২৬টি খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। ওয়াসা বলছে, চলতি অর্থবছরে সংস্থাটি ২৪টি খাল (৪৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার), ৭ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট, ৩০০ কিলোমিটার নালা পরিষ্কারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এর মধ্যে কত কিলোমিটার নালা ও খাল পরিষ্কার করা হয়েছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ড্রেনেজ সার্কেলের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা বেশির ভাগ নালা পরিষ্কার করেছেন। খালের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ড্রেনেজ সার্কেল থেকে এবার কোনো খাল পরিষ্কার বা খনন করা হয়নি। এর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এই খাতে বরাদ্দ নেই। তবে খালসংশ্লিষ্ট ওয়াসার আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে খাল রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়েছে।

>

ঢাকা ওয়াসার দায়িত্বে ২৬টি খাল। সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার ১০টি পুনঃখনন ও পরিষ্কার করা হয়নি।
ঢাকার বৃষ্টির পানি মূলত ওয়াসার প্রায় ৩৮৫ কিমি বড় নালা, ১০ কিমি বক্স কালভার্ট ও ২৬টি খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হয়।
চলতি অর্থবছরে ২৪টি খাল, ৭ কিমি বক্স কালভার্ট, ৩০০ কিমি নালা পরিষ্কারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল।

‘ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও খাল উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের ওই প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ সালের মে মাসে প্রকল্পটি পাস হয়। প্রায় ৫৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের আওতায় আছে ১৬টি খাল। চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি মাত্র ১৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।

ওয়াসা
ওয়াসা

প্রকল্পের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, চলতি অর্থবছরে এই প্রকল্পের আওতায় ৬০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এই টাকায় প্রকল্পের আওতাধীন খালগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে, কয়েকটি পুনঃখননও করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ এখনো চলছে। এই প্রকল্পের বাইরে থাকা ১০টি খালের মধ্যে ৫টি খাল আরেকটি পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে (হাজারীবাগ, বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মান্ডা ও বেগুনবাড়ি খালে ভূমি অধিগ্রহণ এবং খনন/পুনঃখনন প্রকল্প) এবং অবশিষ্ট ৫টি খালের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নকাজ ওয়াসার ড্রেনেজ সার্কেলের মাধ্যমে হওয়ার কথা।

ড্রেনেজ সার্কেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এবার তাঁরা কোনো খাল পরিষ্কার করেননি। আর হাজারীবাগ, বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মান্ডা ও বেগুনবাড়ি খালে ভূমি অধিগ্রহণ এবং খনন/পুনঃখনন প্রকল্প সম্পর্কে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরে শেষ হতে যাওয়া প্রকল্পটির অগ্রগতি মাত্র দেড় শতাংশ। এই হিসাবে ওয়াসার ২৬ খালের মধ্যে ১০টি খালেই এ বছর কার্যত কোনো কাজ হয়নি।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আমাদের যতগুলো খাল আছে তার সর্বোত্তম ব্যবহার আমরা করতে পারছি না। সব খাল পরিষ্কার করা হলে অন্তত জানা যেত এগুলো জলাবদ্ধতার মাত্রা কতটা কমাতে পারে। প্রতিবছর খালগুলো পরিষ্কার করে এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তা না করে বিচ্ছিন্নভাবে নতুন নতুন প্রকল্প দিয়ে কাজ হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে এবারও বড় কোনো কাজ হতে দেখা যায়নি। এতে বৃষ্টি হলেই এবারও জলাবদ্ধতা ও মানুষের ভোগান্তি হবে—এটিই বাস্তবতা।’