করোনাকে জয় করে ফিরলেন বগুড়ার 'কোভিড সেনাপতি'

চিকিৎসক শফিক আমিন
চিকিৎসক শফিক আমিন

মাত্র এক সপ্তাহেই কোভিড-১৯–এর বিরুদ্ধে লড়াই করে আইসোলেশন থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন বগুড়ার কোভিডের সম্মুখযোদ্ধা ও আলোচিত চিকিৎসক শফিক আমিন। কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় ডেটিকেটেড মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শফিক আমিনের দ্বিতীয় দফা নমুনা পরীক্ষায় আজ রোববার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। ১৪ জুন থেকে কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়ে তিনি হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবরেটরি থেকে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন আসার পর আজ সন্ধ্যা সাতটায় শফিক আমিন নিজেই প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এই চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল সোমবার থেকে তিনি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবায় যোগ দেবেন। বর্তমানে হাসপাতালের আইসোলেশনে কোভিড পজিটিভ শনাক্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসাধীন।
কোভিডে সংক্রমিতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে যাওয়া বগুড়ায় শুরু থেকেই কোভিড রোগীদের আন্তরিকভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন চিকিৎসক শফিক আমিন।
গত মার্চের শেষ দিকে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দাঁড়িদহ গ্রামের সাজেদা বেগম নামের এক নারী জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্টসহ কোভিডের উপসর্গে তাঁর স্বামীকে বাঁচানোর জন্য রাতভর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ভোরের দিকে শফিক আমিনকে ফোন দেন। সেখানে একজন চিকিৎসক পাঠিয়ে আলোচনায় আসেন শফিক আমিন। অবশ্য ওই চিকিৎসক সাজেদার বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্বামীর লাশ উদ্ধার করেন।
এরপর ঢাকা থেকে ট্রাকে রংপুরে ফেরার পথে মহাস্থান বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেওয়া শ্রমজীবী শাহ আলমকে (৫০) মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশনে রেখে সুস্থ করে তুলে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় আসেন শফিক আমিন।
এরপর চট্টগ্রাম থেকে ট্রাকে করে রংপুরের মিঠাপুকুরে ফেরার পথে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে মহাস্থান বাসস্ট্যান্ডে পড়ে থাকা শ্রমজীবী সিরাজুল ইমলামকে উদ্ধার ও চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন তিনি।
এ ছাড়া আইসোলেশনে রোগীর চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি মানসিক সাহস জোগানো, খাবার ও পথ্যের ব্যবস্থা, রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনের খাবারের ব্যবস্থা করা, কোভিডে ও উপসর্গে মারা যাওয়া রোগীর জানাজা, কবর খোঁড়া, দাফনের ব্যবস্থা, কবরের জায়গার ব্যবস্থা করা, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় পিপিইর ব্যবস্থা করা, থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থা করা, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর পাশাপাশি বাড়িতে আইসোলেশনে থাকা রোগীদের টেলিমেডিসিন সেবাসহ নানা কাজ করে মানবিক চিকিৎসক হিসেবে প্রশংসা কুড়ান তিনি। নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের কাছে এখন তাঁর পরিচয় ‘কোভিড সেনাপতি’।
নিজে উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস রোগী হয়েও সকাল থেকে রাতবিরাত আইসোলেশনে কোভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে সবার ভরসাস্থল হয়ে ওঠেন তিনি।
শফিক আমিন বলেন, ‘ইনফেকশন প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল প্রশিক্ষণ নিয়েছি। যখনই কোথাও আটকে যাই, তখনই প্রফেসর এ বি এম আবদুল্লাহ স্যারদের মতো অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিই। নিজের জীবন নিয়ে ভয় করি না। এখন যুদ্ধ একটাই, করোনা মহামারি থেকে মানুষকে বাঁচাতে হবে। করোনার বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ে জিততেই হবে।’