রাজশাহীতে গরুহাটে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

রাজশাহী সিটি হাটে গরু ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। বেশির ভাগ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখেই মাস্ক নেই। মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। রোববার বিকেলে হাটের প্রবেশমুখে। ছবি: প্রথম আলো
রাজশাহী সিটি হাটে গরু ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। বেশির ভাগ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখেই মাস্ক নেই। মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। রোববার বিকেলে হাটের প্রবেশমুখে। ছবি: প্রথম আলো

দীর্ঘ তিন মাস পর রাজশাহীতে গরুহাট বসেছে। কোরবানির ক্রেতারা এখনো হাটে না হলেও ব্যবসায়ীদের ভিড় জমেছে প্রচুর। গরু নিয়ে হাটেও এসেও অনেক মানুষ। গরুহাটে এসে ক্রেতা-বিক্রেতারা যেন করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কথা ভুলে গেছেন।

অনেকের কাছেই মাস্ক আছে। কিন্তু মুখে নেই, গলায় ঝুলছে। কেউ আবার কথা বলার সুবিধার্থে মুখ থেকে নামিয়ে রেখেছেন। হাট কমিটির পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, তা কেউ কানে তুলছেন না। মোটরসাইকেল গ্যারেজের মালিক পাঁচ টাকার বিনিময়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন। রাজশাহীর সিটি হাটে রোববার এই অবস্থা দেখা গেছে।

রাজশাহী সিটি হাট জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় একটি গরুহাট। সারা দেশ থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা এই হাটে গরু কেনাবেচা করতে আসেন। প্রায় তিন মাস হাট বন্ধ থাকার পর গত বুধবার থেকে হাট বসতে শুরু করেছে। সপ্তাহে বুধ ও রোববার—এই দুই দিন হাটবার। তবে কোরবানির সামনে করে প্রতিদিনই এই হাট বসে।

এই হাটটি যেখানে করা হয়েছে, সেখানে রাজশাহী নগরের বর্জ্য ফেলা হয়। বৃষ্টিতে তরল বর্জ্য সারা হাটে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় হাঁটুসমান কাদার মধ্যে নেমে ক্রেতা-বিক্রেতারা কেনাবেচা করছেন। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো সুযোগই নেই। তবে হাট কমিটির দায়িত্বে যাঁরা, তাঁরা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরেছেন। গরু কেনার পরে লোকজন তাঁদের কাছে ছাড়পত্র নিতে যাচ্ছেন। তখন তাঁরা মাস্ক নেই কেন, এই প্রশ্ন তুলছেন। মাইকিং করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু হাটে মানুষের চলাফেরা দেখে মনে হচ্ছে, যেন একেবারে স্বাভাবিক একটা সময়।

রাজশাহীর কাটাখালী থেকে গরু বিক্রি করতে এসেছেন আবদুল খালেক (৫৫)। তাঁর মুখে মাস্ক নেই। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তরই দিলেন না। নওগাঁর রানীনগর থেকে এসেছেন আবদুল মজিদ (৬০)। তাঁরও মুখে মাস্ক নেই। গরু টানাটানি করা নিয়েই ব্যস্ত থাকলেন। মুখে মাস্ক নেই কেন—এই প্রশ্ন করারই সুযোগ পাওয়া গেল না। মান্দার চৌবাড়িয়া থেকে এসেছেন সাজিদুর রহমান (৪৪)। তিনি গরু বিক্রি করে যাচ্ছিলেন। মাস্কের প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি একবার শুধু এ প্রতিবেদকের দিকে তাকালেন। এরপর কোনো কথা না বলেই চলে গেলেন। রাজবাড়ী থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী মঞ্জুর হোসেন (৬০)। তাঁর মাস্ক আছে। কিন্তু মুখ থেকে নামানো। বললেন, রাস্তায় পুলিশ ঝামেলা করতে পারে, সেই জন্য মাস্ক পরে এসেছেন। কিন্তু হাটে মাস্ক পরে কথা বলা যাচ্ছে না। তাই নামিয়ে রেখেছেন। ফিরে যাওয়ার সময় আবার পরবেন।

গরুহাট বসার খবর পেয়ে হাটের ভ্রাম্যমাণ হোটেলগুলোও চলে এসেছে। দীর্ঘদিন পরে খাবারের পসরা মেলে বসেছে। গরু ভুনা থেকে শুরু করে সব ধরনের খাবার মিলছে। গরুহাটের দোকানগুলোতে গরুর ক্রেতা-বিক্রেতারা মাটিতে বসেই খান। শুধু বসার জায়গায় বস্তা বা পাটি বিছানো রয়েছে। সেখানেই গায়ে গা লাগিয়ে বসে পড়েছেন ক্রেতারা।

জানতে চাইলে হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান বলেন, তাঁরা সব ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিন্তু মানুষ তা মানছে না। আসলে মানুষ সচেতন নয়। আর নগরের বর্জ্য যেভাবে হাটে ছড়িয়েছে তাতে তাতেও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে তাঁদের করার কিছুই নেই।