'নির্যাতনের অভিযোগ' করা যশোরের কলেজছাত্রের স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

‘পুলিশের নির্যাতনের শিকার’ বলে অভিযোগ করা যশোরের ইমরান হোসেন নামের এক কলেজছাত্রের স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। তাঁর সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানিয়ে যশোরের সিভিল সার্জনকে ২৮ জুনের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের মাধ্যমে ওই প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এক রিটের শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় পুলিশের গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হয়ে থাকলে, তা ওই সময়ের মধ্যে যশোরের পুলিশ সুপারকে রাষ্ট্রপক্ষের মাধ্যমে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

ইমরান (২৩) যশোর সদর উপজেলার কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ৩ জুন যশোরে ‘পুলিশের নির্যাতনে’ কলেজছাত্রের কিডনি অকেজো বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এসব যুক্ত করে নির্যাতনের অভিযোগে বিচারিক তদন্ত চেয়ে ও ভুক্তভোগীকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. হুমায়ন কবির ও মোহাম্মদ কাউছার ১৮ জুন হাইকোর্টে রিটটি দাখিল করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবী মো. হুমায়ন কবির নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, কলেজছাত্রের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানিয়ে ২৮ জুনের মধ্যে তাঁর স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন দিতে যশোরের সিভিল সার্জনকে বলেছেন আদালত। গণমাধ্যমে এসেছে, ওই ঘটনা তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া হয়ে থাকলে, তা ২৮ জুনের মধ্যে দাখিল করতে যশোর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুটি রিপোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের মাধ্যমে দাখিল করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী আদেশের জন্য ২৮ জুন বিষয়টি কার্যতালিকায় আসবে।

ইমরানকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গত বুধবার (৩ জুন) সন্ধ্যার দিকে তিনি যশোরের চৌগাছা উপজেলার সলুয়া বাজার থেকে ইজিবাইকে করে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে একই এলাকার অপর একটি ছেলে ছিল। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সাজিয়ালী ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ইজিবাইকটি থামান। এরপর পুলিশ তাঁর সঙ্গে থাকা ছেলেটির ব্যাগ তল্লাশি শুরু করে। এ সময় ভয়ে তিনি মাঠের মধ্যে দৌড় দেন। পুলিশ তাঁকে ধাওয়া করে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে গিয়ে ধরে বেদম মারধর করে। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখতে পান, তাঁকে পাশের আমবটতলা বাজারের একটি ফার্মেসিতে নেওয়া হয়েছে। এ সময় পুলিশ তাঁর পকেটে গাঁজা দিয়ে আটকের কথা বলে। যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসক উবায়দুল কাদিরকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ইমরান হোসেনের দুটি কিডনির কার্যকারিতা খুবই খারাপ অবস্থায় আছে।

প্রকাশিত খবর অনুসারে, বিষয়টি তদন্তের জন্য ৯ জুন যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’ সার্কেল মো. গোলাম রব্বানী শেখকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এরপর তদন্ত কমিটি ১৫ জুন পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এ ছাড়া যশোর সদর উপজেলার সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মুন্সি আনিচুর রহমানসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা এবং এক কনস্টেবলকে ইতিমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়নি। প্রশাসনিক কারণে তাঁদের যশোর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।