হাসপাতালে স্বজনদের খুঁজছে শিশুটি

হাসপাতালের শয্যায় শিশুটি। মঙ্গলবার রাতে। ছবি: প্রথম আলো
হাসপাতালের শয্যায় শিশুটি। মঙ্গলবার রাতে। ছবি: প্রথম আলো

ব্যান্ডেজে মোড়ানো মাথা। মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন। কোথাও কোথাও রক্ত ঝরছে। প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছে শিশুটি। আর এদিক–ওদিক তাকিয়ে স্বজনদের খুঁজছে। মাঝেমধ্যে ‘আম্মু, আম্মু’ বলে কেঁদে উঠছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী আঞ্চলিক সড়কের কাদশুকা এলাকায় ট্রাক ও থ্রি–হুইলারের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় শিশুটির মা মারা গেলেও অল্পের জন্য বেঁচে যায় সে। প্রথমে তাঁকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে ভর্তি করা হয় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের নারী ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে শিশুটির। দুর্ঘটনায় মা মারা যাওয়ার খবর সে এখনো জানে না।

পুলিশ জানায়, গতকাল রাতের দুর্ঘটনায় থ্রি–হুইলারটি দুমড়ে–মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই অজ্ঞাতনামা এক নারী, নওগাঁর ধামইরহাটের ইয়াকুব আলী সরকারসহ চারজন মারা যান। ট্রাকের চাপায় শিশুটিসহ আহত হয়েছেন পাঁচজন। আহত অবস্থায় স্থানীয় ব্যক্তিরা থ্রি–হুইলারের চালক লালাপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম (৪৫), শিশুটি ও শুকানিপাড়া এলাকার সাদেকুল ইসলামকে (৪২) বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে সেখানে চিকিৎসক সাদেকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর শহিদুল এবং ওই শিশুকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে। গতকাল রাতে শহিদুলকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। আজ বুধবার সকালে তিনি মারা যান।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর গতকাল রাতে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে আছে শিশুটি। মাঝেমধ্যেই যন্ত্রণায় ছটফট করছে। অপরিচিত নারী দেখলেই ‘আম্মু, আম্মু’ বলে ডাকছে। ওয়ার্ডে থাকা রোগীদের স্বজনেরা মাঝেমধ্যে শিশুটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এ সময় হাসপাতালে ছিলেন ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, শিশুটি এখনো বুঝতে পারেনি যে তার মা মারা গেছেন। জানতে চাইলে সে বিড়বিড় করে নিজের ও মায়ের নাম বলছে।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি বড় নির্মম। শিশুটি মাথায় আঘাত পাওয়ায় পাঁচটি সেলাই করতে হয়েছে। মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লেগেছে। সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য ওর পাশে আপনজনদের থাকা প্রয়োজন।

বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল হক প্রধান বলেন, ট্রাকের সঙ্গে থ্রি–হুইলারের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হলেও শিশুটি বেঁচে গেছে। তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।