মাদারীপুরে তিন দিন ধরে আসেনি করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদন

মাদারীপুরে প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ করা হলেও তিন দিন ধরে আসেনি করোনা পরীক্ষার কোনো প্রতিবেদন। ঢাকা থেকে ফলাফল না আসায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতির কারণে ফলাফল নিয়ে জটিলতা হচ্ছে বলে ধারণা করছেন সাধারণ মানুষ।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে জেলার সব নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য এক দিন পরপর পাঠানো হতো ঢাকায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ল্যাবে। ১৫ ও ১৬ জুন ৮৪ জনের নমুনাও পাঠানো হয় সেখানে। এরপরে ১৮ জুন নির্দেশনা আসে, জেলার সব নমুনা পাঠানো হবে আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিনের ল্যাবে। এরপর থেকে নতুন ল্যাবে অন্তত ৮০০ জনের নমুনা পাঠানো হয়, যার একটি প্রতিবেদনও আসেনি। এ ছাড়া আইসিডিডিআরবিতে পাঠানো ৮৪ জনের প্রতিবেদন পাওয়া নিয়েও শুরু হয়েছে জটিলতা।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ মীর রিয়াজ আহম্মেদ আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা থেকে ২১ জুন ২৩৭ ও ২৩ জুন ১৯৯ জনের নমুনা ঢাকায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার আরও ২৫৪ জনের নমুনা পাঠানো হবে। এ ছাড়া ১৫ ও ১৬ জুন ৮৪ জনসহ এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জনের করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনো আসেনি। আমরা রিপোর্ট পেতে প্রতিদিন যোগাযোগ করছি, কিন্তু রিপোর্ট হাতে পাচ্ছি না।’
নমুনা দিয়েও সময়মতো প্রতিবেদন না আসায় জেলায় বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। এ পর্যন্ত জেলায় ৬০৮ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। সবশেষ ১৯ জুন জেলায় শনাক্ত হন ৬০ জন। এরপর নতুন প্রতিবেদন না আসায় নতুন শনাক্তের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ১৫ জন। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় জেলার ৪টি পৌরসভার ২০টি ওয়ার্ড ও ৪টি উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরপরে রেড জোন এলাকায় সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে। তবুও সংক্রমণ কমছে না। তাই মাদারীপুর জেলায় পিসিআর ল্যাব (করোনাভাইরাস পরীক্ষাগার ল্যাব) স্থাপনের দাবিসহ করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি খান মো. শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন দিন ধরে আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নতুন শনাক্তের কোনো খবর পাইনি। প্রতিবেদন নিয়ে তারা নানান কথা বলছে। আগে সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যে টেস্টের রেজাল্ট পাওয়া যেত। এখন ১৪ থেকে ১৫ দিন চলে যাচ্ছে, রিপোর্টের কোনো খবর নেই। এমন চলতে থাকলে মানুষকে সুরক্ষা নিশ্চিত কখনোই সম্ভব নয়। বরং করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাই সংক্রমণ কমাতে এ জেলায় দ্রুত পিসিআর ল্যাব ও আইসিইউ বসানো খুবই দরকার।’
আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জেলার সিভিল সার্জন মো. সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন দিন ধরে আমরা প্রতিদিন কয়েকবার করে রিপোর্ট আনতে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে আমরাও বিব্রত। আশা করছি, কাল রেজাল্ট পাওয়া যাবে।’ সংকটের কারণ কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন ল্যাবে নমুনা পাঠানো হচ্ছে, তা ছাড়া আগের ল্যাবে কিছু নমুনা জমা আছে। সেখানে প্রচুর চাপ থাকায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
মো. সফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা ভিডিও কনফারেন্সে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার জানানো হয়েছে। জেলায় স্থাপন করা হবে, তবে তা সময় লাগবে।’