ময়মনসিংহ নগরে বাড়ি ভাড়া দিতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ

ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ নগরের আকুয়া এলাকায় বসবাস করেন একজন নারী। তিনি মানুষের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। তাঁর স্বামী ভাড়ায় ইজিবাইক চালান। করোনা পরিস্থিতির কারণে ওই নারীর নিজের কাজ হারান। সাধারণ ছুটির সময় ইজিবাইকও চলেনি ময়মনসিংহ নগরে। একই পরিবারের দুজনের রোজগার বন্ধ হয়ে গেলে চার মাসের বাড়ি ভাড়া বাকি পড়ে। ওই পরিবারটি এখন বাড়ি ভাড়া মেটানোর জন্য টাকা ধার বা কাজের অগ্রিম টাকা নেওয়ার চেষ্টা করছে।


করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ময়মনসিংহ নগরে বসবাসকারী বিভিন্ন পেশার মানুষ নিজেদের উপার্জন হারিয়েছেন। ওই সব মানুষ নিজেদের পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এতে নগরের আকুয়ার ওই নারীর মতো অনেকেই বাড়ি ভাড়া দিতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে। সম্প্রতি অনেক পরিবার বাড়ি ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে বলেও জানা গেছে।

ময়মনসিংহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র মেসে বসবাস করা শিক্ষার্থীরাও বাড়ি ভাড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বেশির ভাগ ছাত্র মেস এখন শূন্য হলেও বাড়ি ভাড়া দিতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া মওকুফের জন্য দাবি জানিয়েছেন।

বিভিন্ন পেশার কয়েকজন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে নগরের মানুষের উপার্জন কমে যাওয়ায় চরম আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। সাধারণ ছুটির শুরুর দিকে সরকারিভাবে ও বিভিন্ন ব্যক্তি উদ্যোগে রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়া মানুষদের খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। খাদ্য সহযোগিতা পেলেও কেউ নগদ অর্থ সহায়তা পায়নি। এ কারণে তখন থেকেই অনেক পরিবারের বাড়ি ভাড়া বকেয়া হতে শুরু করে। সাধারণ ছুটির পর মানুষ ঘর থেকে বের হতে শুরু করলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দিনে দিনে বাড়ছে। মানুষ ঘর থেকে বের হলেও জীবনযাত্রা স্বাভাবিক না হওয়ায় মানুষের উপার্জনও স্বাভাবিক অবস্থায় পৌঁছায়নি। এতে মানুষ বাড়িসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন মেটাতে পারছেন না।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ জানান, মানুষ উপার্জন হারিয়ে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তিনিই নিজেকেই উদাহরণ হিসাবে উপস্থাপন করে বলেন, আমার ছাপার ব্যবসা। করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা বন্ধ। চার মাসের বাড়ি ভাড়া বকেয়া হয়েছে। আমার মতো ময়মনসিংহ নগরের অনেকের রোজগার বন্ধ। যাঁরা ভাড়া বাড়িতে থাকেন তাঁরা অনেকেই বাড়ি ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন বলেও জেনেছি। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়া মওকুফও করছেন অনেক বাড়ির মালিক।

ময়মনসিংহ নগরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাসকারীদের বড় অংশই শিক্ষার্থী। তাঁরা সরকারি আনন্দ মোহন, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা নগরের বিভিন্ন এলাকায় মেস ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীরা মেস ভাড়া দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েন। অনেকের পরিবারের উপার্জন কমে যাওয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে মেস ভাড় মওকুফের আবেদন জানিয়েছেন।

সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থী দিবা সরকার বলেন, মেস ভাড়া নিয়ে অনেক শিক্ষার্থীই বিপাকে পড়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক নিজেদের উদ্যোগে বাড়ি ভাড়া অর্ধেক কমিয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী মেস ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ বাড়ি ভাড়া দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন, এটা বাস্তব। তবে সিটি করপোরেশনের বাড়ি ভাড়া কমানোর বা মওকুফের সুযোগ নেই। বাস্তব এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ির মালিকেরা চাইলে ভাড়া কমাতে বা মওকুফ করতে পারেন। সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে সুযোগ থাকলে মালিক মালিকদের অনুরোধ করতে পারে বড়জোর।