করোনার উপসর্গ, চেয়ারেই মৃত্যু বৃদ্ধের

চেয়ারে বসে ছিলেন বৃদ্ধ এই আইনজীবী (৮৫)। মরার পরেও বসেই আছেন। শুধু মাথাটা একদিকে একটু হেলে গেছে। আধা ঘণ্টা আগে তাঁকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখে তাঁর ভাতিজা সকালের নাশতা আনতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন তাঁর মাথাটা একদিকে হেলে পড়েছে। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। তাঁর করোনা পরীক্ষা না করে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

মারা যাওয়া এই বৃদ্ধ রাজশাহী নগরের নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। তার পৈতৃক বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার দমদমা গ্রামে। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তিনি একাই রাজশাহীর বাসায় থাকতেন।

বৃদ্ধের শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ার খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার গ্রাম থেকে তাঁর ভাতিজা এসেছেন। তিনি জানান, কাকা একাই বাসায় থাকতেন। রান্নাবাড়া করতে পারতেন না। পারলে খেতেন না, পারলে না খেয়ে পড়ে থাকতেন। এতে কাকা দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ করেই জ্বর আসে। এতে কাকা শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে তিনি মঙ্গলবার রাজশাহীতে এসে তাঁর (কাকা) সেবাযত্ন করতে শুরু করেন। জ্বর বেশি হলে গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁদের করোনার জন্য নির্ধারিত খ্রিষ্টান মিশন হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসক দেখে সাত-আট ধরনের ওষুধ লিখে দেন। আর বলেন, ‘আশা করি, ওই ওষুধগুলো খেলেই ভালো হয়ে যাবেন।’ ভাতিজা জানান, তিনি চিকিৎসককে বলেছিলেন করোনা পরীক্ষা করা লাগবে কি না। চিকিৎসক বললেন, ‘তাঁর এটা হয়তো করোনা নয়। পরীক্ষা লাগবে না। বয়স হয়েছে। না খেয়ে দুর্বল হয়ে গেছে।’

ওই বৃদ্ধের ভাতিজা বলেন, সকালে কাকা একাই উঠেছেন। উঠে শৌচাগার ব্যবহার করেছেন। খাওয়ার আগে দুটো ওষুধ ছিল, খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন। খেতে চাননি। যখন নাশতা আনতে যান, তখন তাঁর কাকা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন। বেলা পৌনে ১১টার সময় নাশতা নিয়ে বাসায় ফিরে দেখেন, কাকার মাথাটা হেলে পড়েছে। পরে ডাকাডাকি করে নিশ্চিত হন যে তিনি মারা গেছেন। তারপরে লোকজনকে ডাকাডাকি করেন। রাজশাহী কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন তাঁর মরদেহ সৎকারের উদ্যোগ নিচ্ছে।