প্রাণে বেঁচে আসার কাহিনি শোনালেন মুন্সিগঞ্জের যাত্রীরা

লঞ্চ দুর্ঘটনা থেকে প্রাণ নিয়ে ফেরা জাহাঙ্গীর হোসেন। সোমবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি লঞ্চঘাটে। ছবি: প্রথম আলো
লঞ্চ দুর্ঘটনা থেকে প্রাণ নিয়ে ফেরা জাহাঙ্গীর হোসেন। সোমবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি লঞ্চঘাটে। ছবি: প্রথম আলো

সঙ্গী কয়েকজনের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ছিলেন ওমর চান। হুট করেই বিকট শব্দ আর কাঁপুনি। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই উল্টে যাচ্ছিল মর্নিং বার্ড। জীবন বাঁচাতে পানিতে লাফিয়ে পড়েন ওমর চান। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন পানিতে লাফ দেন। অনেকে পানির নিচ থেকে টেনে ধরছিলেন। কোনো রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন ওমর। তীরে ওঠার আগে তিনি এক নারীকেও উদ্ধার করে আনেন।

রাজধানীর সদরঘাট এলাকার ফরাশগঞ্জে সোমবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে এই নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে। ময়ূর-২ নামের একটি লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় মর্নিং বার্ড নামের লঞ্চটি। মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিমের কাঠপট্টি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া এই লঞ্চে শতাধিক যাত্রী ছিল। এই নৌ-দুর্ঘটনায় হতাহত লোকজনের অধিকাংশই মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা। বিকেল ৪টা পর্যন্ত জীবিত ফিরে আসা ৮-১০ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তাঁরা বর্ণনা করেছেন মৃত্যুকে খুব কাছে থেকে দেখে আসার অভিজ্ঞতা।

জাহাঙ্গীর হোসেন নামের একজনের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম পৌরসভার এনায়েত নগরে। রাজধানীর বঙ্গবাজারে কাপড়ের দোকানে কাজ করেন তিনি।  আট বছর ধরে কাঠপট্টি থেকে লঞ্চে করে ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন।

জাহাঙ্গীর বলেন, প্রতিদিনের মতো সোমবার সকাল পৌনে ৮টায় তিনি মর্নিং বার্ড লঞ্চে করে ঢাকার পথে রওনা করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মীরকাদিম পৌর এলাকার প্রায় ১০ জন যাত্রী। কথা আর আড্ডা দিয়ে তাঁরা লঞ্চের ভেতরে সময় কাটাচ্ছিলেন। লঞ্চটি ফরাশগঞ্জ ঘাট এলাকায় পৌঁছায় সকাল সোয়া ৯টার দিকে। এ সময় হঠাৎ তাঁদের লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয় ময়ূর-২ নামের একটি লঞ্চ। ধাক্কা খেয়ে একপাশে কাত হয়ে যায় মর্নিং বার্ড। সবাই লঞ্চ থেকে ছিটকে নদীতে পড়তে থাকে। তিনিও পানিতে পড়ে যান। তাঁর গায়ের ওপর পড়েন ১০-১২ জন যাত্রী। চোখের সামনেই অনেকে পানিতে তলিয়ে যান। তিনিও ডুবতে ডুবতে ভেসে ওঠেন। কোনো রকম সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম নন তিনি।

জাহাঙ্গীরের ভাষায়, ৫ মিনিট আগেও যাঁদের মধ্যে প্রাণবন্ত আড্ডা চলছিল, তাঁরাই চোখের সামনে ডুবে হারিয়ে গেলেন। এটা যে কতটা কষ্টের, তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। এই দুর্ঘটনা থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসা নাজমা আক্তার, জুমকি, কাকলি বেগম ও মমিন আলীও একই ধরনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা তাঁদের কারোরই এর আগে ছিল না।

নাজমা আক্তার বলেন, তিনি চিকিৎসা নিতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। লঞ্চটি যে পাশ দিয়ে ডুবছিল, তার বিপরীত পাশে ছিলেন। সেখানকার জানালা দিয়ে তিনি বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, ‘চোখের সামনে পরিচিত মুখগুলো লাশ হয়ে গেল। এটা আমি মেনে নিতে পারছি না।’