শিশুদের জন্য কিছু করার স্বপ্ন ছিল অবিন্তার

অবিন্তা কবির
অবিন্তা কবির

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করার স্বপ্ন ছিল অবিন্তা কবিরের। সেই স্বপ্নপূরণে চালু হয়েছে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন স্কুল। ৩৬ জন দিয়ে শুরু করা স্কুলে তিন বছরের মাথায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০–এ। তারা সবাই দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ে।

ঢাকায় ফেরার তিন দিন পর ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন অবিন্তা কবির। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে ২০১৭ সালের ৪ মার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন’। স্কুলটি এই ফাউন্ডেশনের অনেক কার্যক্রমের একটি।

বারিধারার মাদানি এভিনিউর এই স্কুলে আছে তিন হাজার শিশুতোষ বইয়ের একটি গ্রন্থাগার। আছে কম্পিউটার ল্যাব। নামমাত্র ফি হিসেবে যে সামান্য টাকা নেওয়া হয়, সেটাও মাটির ব্যাংকে জমা রাখা হয় শিক্ষার্থীদের নামে। স্কুল ছাড়লে সে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম কেবল শিশুদের পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ২০১৭ সালের মে মাসে চালু হয়েছে ‘অবিন্তা সাইবার সেন্টার অ্যান্ড আর্কাইভ’। সেখানে এখন অটোমেশনের কাজ চলছে। একট আর্কাইভ সাইটও করে দেওয়া হয়েছে।

অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের কিউরেটর সুলতান এম মাইনুদ্দীন জানান, অবহেলিত বৃদ্ধারা যাতে শিশুদের সঙ্গ পান, এমনটাই ইচ্ছা ছিল অবিন্তার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১২ জন গৃহহীন মানুষকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনকে কিনে দেওয়া হয়েছে বিশেষ পোশাক ‘প্রেশার গার্মেন্টস’। পুড়ে গিয়ে শরীরের চামড়া যাতে ফুলে না যায় অথবা ফুলে গেলেও পরবর্তী সময়ে চামড়া যাতে মসৃণ হয়, সে জন্য এই পোশাক ব্যবহার করা হয়।

ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শুরু হয়েছে ‘অবিন্তা ইয়াং চেঞ্জ লিডার’ নামে একটি কর্মসূচি। ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত। এতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন আইডিয়া সংগ্রহ করে তিনটি আইডিয়াকে পুরস্কৃত করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি ইউনিভার্সিটির অক্সফোর্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন বাঙালি এই তরুণী। ইমোরি ইউনিভার্সিটি ফারাজ হোসেন ও অবিন্তা কবিরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের অক্সফোর্ড কলেজ ক্যাম্পাসে স্থাপন করেছে ‘হোসেন-কবির রুম’। অবিন্তার নামে বৃত্তি চালু করা হয়েছে ইমোরি ইউনিভার্সিটির অক্সফোর্ড কলেজে। এই বৃত্তির আওতায় অক্সফোর্ড কলেজের টিউশন ফি, বাসস্থানসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহন করবে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন। এই বৃত্তিতে বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সর্বশেষ এই বৃত্তি লাভ করেছেন ভারতীয় তরুণী দিশা শিক্ষালাভ।

লিটল আর্টস নামে আরও একটি কর্মসূচি আছে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের। এতে সুবিধাবঞ্চিত ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিয়ে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা হয়। ২৮টি স্কুলে এই কর্মসূচি হয়েছে।

করোনাকালে অভাবী মানুষের পাশেও দাঁড়িয়েছে অবিন্তা ফাউন্ডেশন। অনেক পরিবারকে তারা সাহায্য করেছে, হাতে তুলে দিয়েছে খাদ্যসামগ্রী। অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মালিকা আহসান বললেন, সবই হয়েছে অবিন্তার স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে। অবিন্তা বলতেন, ‘পৃথিবীতে আমি জন্মেছি দুস্থদের সাহায্য করার জন্য।’ অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন সেই কাজটিই করে চলেছে।