মৌলভীবাজারে কোভিড রোগীদের জন্য এইচএফএনসি স্থাপনের উদ্যোগ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলছে। মৌলভীবাজার জেলায় এরই মধ্যে ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা। কিন্তু জটিল রোগীদের জন্য এখনো জেলায় ভালো চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। সংকটাপন্ন কোভিড-১৯ রোগীদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অক্সিজেনের। 

তাই জটিল রোগীদের সুরক্ষায় সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থাকে সহযোগিতার মাধ্যমে আরও কার্যকর করতে এগিয়ে এসেছেন জেলার চিকিৎসক সংগঠন, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক সামাজিক সংগঠন এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানকারী ব্যক্তি। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে হাই ফ্লো নেইজল ক্যানুলা (এইচএফএনসি) ও মেনিফোল্ড অক্সিজেন সিলিন্ডার সিস্টেম স্থাপনের। এরই মধ্যে অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে এগুলো স্থাপনে অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে।

উদ্যোক্তা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলাবাসীর মধ্যে উদ্বেগও বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠনসহ নানা মাধ্যম থেকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপনসহ চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত করার দাবি সামনে এসেছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট, প্রগতিশীল ছাত্র জোট, জাসদসহ বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। এর মধ্যে গত ২৪ জুন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি চিকিৎসক শাব্বির হোসেন খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর আইডিতে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে এইচএফএনসি ও মেনিফোল্ড অক্সিজেন সিলিন্ডার স্থাপনে সবার সহযোগিতা চেয়ে একটি আবেদন করেন। তাঁর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন অনেক চিকিৎসক, তরুণ উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী, প্রবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এসব যন্ত্র স্থাপনের জন্য শুধু চিকিৎসকেরা প্রাথমিকভাবে তিন লাখ টাকার বেশি জমা দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিকভাবে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে এইচএফএনসি প্রদান ও স্থাপন বাস্তবায়নে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এর সভাপতি করা হয়েছে চিকিৎসক শাব্বির হোসেন খানকে। সদস্যসচিব তরুণ উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী সুমন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ ব্যবসায়ী মনোয়ার আহমেদ রহমান এবং সদস্য বিএমএ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক শাহজাহান কবীর চৌধুরী ও ব্যবসায়ী হাসিব হোসেন খান। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, জেলা সিভিল সার্জনসহ সাতজন চিকিৎসককে কমিটির উপদেষ্টা রাখা হয়েছে। এই উদ্যোগের বাইরেও সংগঠক কাওসার ইকবালের উদ্যোগে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি ও প্রবাসীদের নিয়ে একাধিকবার ভিডিও কনফারেন্স হয়েছে। সেই সম্মেলনেও জেলার স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার উন্নয়নে আশু ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই উদ্যোক্তারাও যুক্ত হয়েছেন এইচএফএনসি ও মেনিফোল্ড অক্সিজেন সিলিন্ডার স্থাপনের তৎপরতার সঙ্গে।

বিএমএ এবং মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি, এইচএফএনসি প্রদান ও স্থাপন বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টা চিকিৎসক এম এ আহাদ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি এইচএফএনসি স্থাপনের পাশাপাশি একটা আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা যায় কি না। এ উদ্যোগে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। আমেরিকা থেকে দ্য অপটিমিস্ট নামে প্রবাসীদের অর্থায়নে পরিচালিত একটি সংগঠন হাই ফ্লো নেইজল ক্যানুলার জন্য অর্থ সহায়তা দিয়েছে। ঢাকার মৌলভীবাজার সমিতি এবং জালালাবাদ সমিতি কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে।’

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে এইচএফএনসি প্রদান ও স্থাপন বাস্তবায়ন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানি ও পরিবেশকের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের সূত্রে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে এইচএফএনসি ও মেনিফোল্ড অক্সিজেন সিলিন্ডার স্থাপনের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ লাখ টাকা। এই ব্যয় আরও বাড়তে পারে। এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো পাওয়া গেছে। অবশিষ্ট টাকাও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া যাবে। এতে করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত জটিল রোগীদের জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে অক্সিজেন সুবিধা স্থাপনের কাজের অনেকখানি অগ্রগতি হলো।

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে এইচএফএনসি প্রদান ও স্থাপন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শাব্বির হোসেন খান গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে এইচএফএনসি ও মেনিফোল্ড অক্সিজেন সিলিন্ডার সিস্টেম নেই। করোনার জটিল রোগীদের অক্সিজেন লাগে। এ ক্ষেত্রে এইচএফএনসি ও মেনিফোল্ড অক্সিজেন সিলিন্ডার সিস্টেম স্থাপন করা গেলে রোগীদের চিকিৎসায় বড় সহায়তা হবে। কারণ যত বেশি স্পিডে অক্সিজেন দেওয়া যাবে, তত বেশি রোগীকে বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকবে। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশন সুবিধা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। এ ক্ষেত্রে রোগীর আর্থিক সাশ্রয়ও হবে। অনেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়েছেন। আইসিইউ চালুর আগ পর্যন্ত জেলার মানুষ এই সার্ভিসটা পাবে।’