করোনার ধকলে 'খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে' উড়ছে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট

>
  • জুনের প্রথম ৮ দিনে প্রতি ফ্লাইটে যাত্রী ছিল গড়ে ৩৩ জন
  • ৯-১৭ জুনে ফ্লাইটপ্রতি ২৯ জন যাত্রী
  • ১৮-৩০ জুন ফ্লাইটপ্রতি ২৩ জন যাত্রী

দীর্ঘ বিরতির পর এক মাস ধরে দেশের অভ্যন্তরে ফ্লাইট চলাচল করছে। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে, যাত্রীসংখ্যা ততই যেন কমছে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হলেও যাত্রীদের আস্থা মিলছে না। সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কারণে আকাশপথে যাত্রী মিলছে না।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‌‘দেশের কোভিড রেট উঁচু হচ্ছে। মানুষের মধ্যে তাই শঙ্কা আছে। একেবারে প্রয়োজন ছাড়া ফ্লাইটে ভ্রমণ করছে না। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে কিছু যাত্রী আসছেন। যাত্রীদের আস্থা আসবে। একটু সময় লাগবে।’

করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে গত ২১ মার্চ থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয় বেবিচক। তবে গত ১ জুন ঢাকা থেকে সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটে সীমিত পরিসরে ৭৫ শতাংশ যাত্রী নেওয়ার শর্তে ফ্লাইট চলাচলে অনুমতি দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস ও নভোএয়ারকে আসা-যাওয়া মিলিয়ে ৪৮টি ফ্লাইট পরিচালনার কথা ছিল। কিন্তু যাত্রীসংকটের কারণে ১ জুন ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে দুটি ফ্লাইট চালিয়ে বিমান আর আকাশে ওড়েনি। ১১ জুন থেকে যশোরে ফ্লাইট চালু হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বরং যাত্রীসংখ্যা পড়তির দিকে।

বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত প্রথম ৮ দিনে ২২৩টি ফ্লাইটে ৭ হাজার ২২০ জন যাত্রী ঢাকা থেকে চলাচল করেছেন। এর মধ্য ঢাকায় এসেছেন ৩ হাজার ৮১০ জন যাত্রী। ঢাকা ছেড়ে গেছেন ৩ হাজার ৪১০ জন। গড়ে প্রতিদিন আকাশপথে চলাচল করেছেন ৯০২ জন। আর গড়ে প্রতি ফ্লাইটে যাত্রী ছিল ৩৩ জন।

পরবর্তী দিনগুলোয় যাত্রীসংখ্যা আরও কমতি দিকে থাকে। ৮ থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত ১১ দিনে ৯ হাজার ১৩৮ জন যাত্রী চলাচল করেছেন। গড়ে প্রতিদিনের যাত্রী ছিল ৮০৩ জন। এই ১১ দিনে ৩২৯টি ফ্লাইট চলছে। প্রতি ফ্লাইটে যাত্রীর গড় ছিল ২৭ দশমিক ৭৭।

১৮ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল করেছে ৫১৮টি, যাত্রী ছিল ১২ হাজার ২৭৫ জন। জুন মাসের শেষ ১৩ দিনে গড়ে প্রতি ফ্লাইটে যাত্রী ছিল ২৩ দশমিক ৬৯ জন। সব মিলিয়ে পুরো জুন মাসে অভ্যন্তরীণ রুটে ১০ হাজার ৫০টি ফ্লাইট চলাচল করেছে। যাত্রী ছিল ২৮ হাজার ৬৩৩ জন। পুরো জুন মাসে প্রতি ফ্লাইটে গড়পড়তা যাত্রী ২৭ জন।

অথচ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতি ফ্লাইটে ৭৫ শতাংশ যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী ৭৪ আসনের উড়োজাহাজে ৫০ জনের মতো যাত্রী বহন করার কথা। সেখানে পুরো জুন মাসে প্রতি ফ্লাইটে যাত্রী মিলেছে গড়ে ২৭ জন। এই সময়ে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। প্রথম দিকে টিকিটের মূল্যে ছাড় দিয়ে যাত্রী পাওয়ার চেষ্টা করেছিল বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো। কিন্তু যাত্রীদের ভীতি দূর হয়নি। পরে সব রুটেই সর্বনিম্ন ভাড়া ২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু যাত্রী না পাওয়ায় লোকসানের বোঝা ভারী হচ্ছে।

বর্তমানে ঢাকা থেকে চারটি রুটে ইউএস–বাংলা ও নভোএয়ারের প্রতিদিন ৪৮টি ফ্লাইট পরিচালনার কথা। কিন্তু যাত্রীসংকটে প্রতিদিনই একাধিক ফ্লাইট বাতিল করতে হচ্ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম রুটে খুব একটা যাত্রী মিলছে না। কারণ, বন্দরনগরীর করোনা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। এ ছাড়া যশোরে শুরুতে যাত্রী পাওয়া গেলেও মধ্য জুন থেকে খুলনা বিভাগের করোনা পরিস্থিতির বেশ অবনতি হয়েছে। তবে সৈয়দপুর রুট তুলনামূলক কিছুটা ভালো। কারণ, অভ্যন্তরীণ রুটগুলোর মধ্যে ঢাকা-সৈয়দপুরের দূরত্ব সবচেয়ে বেশি। দ্রুত নিরাপদে যাওয়ার কারণে এই রুটে যাত্রী কিছুটা বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

ইউএস–বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীরা দেশে এসে স্বাভাবিক সময়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে করে ঢাকা ছাড়তেন। এখন আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও প্রায় বন্ধই রয়েছে। বিদেশ থেকে দেশে আসছেন কম যাত্রী। তা ছাড়া দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হয়নি। খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া কেউ ভ্রমণ করছেন না।

কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি না হলে যাত্রীরা সহজে ফিরবেন না বলে জানান এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১ জুন অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালুর প্রথম দু-তিন দিন টিকিটের চাহিদা কিছুটা ছিল। তারপর যাত্রী কমতে থাকে। কারণ, করোনা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে।