কখন আসবে ব্যাপারী, বেচা হবে গরু

>প্রান্তিক চাষিরা ঋণ নিয়ে গরু কিনে বড় করেছেন। এখন গরু বিক্রি করতে না পারলে বিপদ।

বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লার মোমিন মোল্লা একজন বড় খামারি ও গরুর ব্যাপারী। কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য তিনি প্রতিবছরই স্থানীয় হাট ও বিভিন্ন বাড়ি থেকে গরু কেনেন। এরপর নিজের খামারের গরুর সঙ্গে কেনা গরুগুলো মিলিয়ে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন। গত বছরও তিনি ঢাকার কোরবানির হাটে ১০৫টি গরু বিক্রি করেছিলেন। এবার তিনি ২০টি ষাঁড় বড় করেছেন। কিন্তু অন্যবারের মতো গরু কেনেননি। কারণ, তিনি ধরেই নিয়েছেন, এবার ঢাকায় গিয়ে গরু বিক্রি করা যাবে না।

শুধু মোমিন মোল্লাই নন, তাঁর মাধ্যমে অনেক ব্যাপারী কোরবানির এক-দেড় মাস আগেই এ এলাকায় এসে জড়ো হন। তাঁরা হাটে ও বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনেন। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে কেউ গরু কিনতে আসছেন না।

ফলে পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার গরু পালনকারীরা এবার গরু বিক্রি নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই ধরে নিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কোরবানির হাটে গরু বিক্রি করা যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে বড় ও সচ্ছল খামারিরা গরু বিক্রি না করে রেখে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু ছোট খামারি ও প্রান্তিক চাষিরা গরু বিক্রির জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছেন। কারণ, কোরবানির হাট সামনে রেখে গরু লালন-পালন করতে গিয়ে তাঁরা ঋণ নিয়েছেন। তাঁদের ঋণ শোধ করতে হবে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া দেশের অন্যতম গরু পালনকারী এলাকা। কোরবানির হাট সামনে রেখে দুই উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার খামারে অন্তত ২৫ হাজার গরু পালন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রান্তিক কৃষক ও অন্য অনেক পরিবারও লাভের আশায় এক-দুটি করে গরু পালন করেছে। সব মিলিয়ে কোরবানির হাটে বিক্রির উপযোগী প্রায় ৫০ হাজার গরু দুই উপজেলায় রয়েছে।

সাঁথিয়ার আমাইকোলা গ্রামের মুদিদোকানি আবদুস সামাদ জানান, কোরবানির হাট সামনে রেখে বছরখানেক আগে তিনি দুটি গরু কিনেছিলেন। এ দুটি গরুর পেছনে সব মিলিয়ে দেড় লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন, আবার গো-খাদ্যের দোকানেও দেনা আছে। তাই যে করেই হোক গরু দুটি বিক্রি করে দেনা শোধ করতে চান তিনি। কিন্তু অন্যবার বাড়িতে এসে ব্যাপারীরা গরু দরদাম করলেও এবার দেখা নেই। এ ছাড়া তিনি গত ২৩ জুন সাঁথিয়ার করমজা পশুর হাটে একটি গরু তুলেছিলেন। বিক্রি করতে পারেননি।

বেড়া-সাঁথিয়ার পশুর হাটগুলোয় গত সপ্তাহ দুয়েক হলো প্রচুর গরু উঠতে শুরু করেছে। মূলত, ছোট খামারি ও প্রান্তিক চাষিরা সেখানে গরু তুলছেন। তবে ক্রেতার অভাবে গরুর তেমন বেচাকেনা নেই বলে জানা গেছে।